রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে শরীরে একটি বিশেষ লক্ষণ দেখা দেয়, যা হলো জন্ডিস (Jaundice)। এটি মূলত যকৃৎ (Liver) বা রক্তে থাকা বিলিরুবিনের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণে হয়। বিলিরুবিন হলো হিমোগ্লোবিন ভাঙনের একটি উপজাত, যা সাধারণত লিভার প্রক্রিয়াজাত করে পিত্তের (Bile) মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়। কিন্তু লিভার বা পিত্তনালীর সমস্যায় এটি জমে গেলে ত্বক, চোখ ও প্রস্রাবের রঙ পরিবর্তিত হয়।
• বিলিরুবিনের উৎপত্তি: রক্তের লোহিত কণিকা ভেঙে গেলে হিমোগ্লোবিন থেকে বিলিরুবিন তৈরি হয়। এটি প্রথমে অপরিপক্ব (Unconjugated) অবস্থায় থাকে এবং পরে লিভারে গিয়ে পানিতে দ্রবণীয় (Conjugated) রূপে রূপান্তরিত হয়।
• লিভারের ভূমিকা: লিভার বিলিরুবিনকে প্রক্রিয়াজাত করে পিত্তে রূপান্তরিত করে, যা অন্ত্রে নিঃসৃত হয়। যদি লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যেমন হেপাটাইটিস, সিরোসিস বা ফ্যাটি লিভারের কারণে, তখন বিলিরুবিন শরীরে জমে যায়।
• জন্ডিসের প্রধান লক্ষণ: ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়, প্রস্রাব গাঢ় হলুদ বা বাদামি হয়, মল ফ্যাকাশে হয়, ক্ষুধামান্দ্য ও দুর্বলতা দেখা দেয়। এটি রক্তে বিলিরুবিনের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির সরাসরি ফল।
• জন্ডিসের প্রকারভেদ: সাধারণত তিন ধরনের জন্ডিস দেখা যায়—
Pre-hepatic jaundice: রক্তে অতিরিক্ত হিমোলাইসিসের কারণে হয়, যেমন ম্যালেরিয়া বা সিকেল সেল অ্যানিমিয়া।
Hepatic jaundice: লিভারের কার্যক্ষমতা কমে গেলে হয়, যেমন হেপাটাইটিসে।
Post-hepatic jaundice: পিত্তনালী বন্ধ হয়ে গেলে হয়, যেমন গলস্টোন বা টিউমারের কারণে।
• বিলিরুবিনের স্বাভাবিক মাত্রা: সাধারণত প্রতি ডেসিলিটারে ০.৩–১.২ মিলিগ্রাম পর্যন্ত স্বাভাবিক। এর বেশি হলে জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দেয়।
• চিকিৎসা ও প্রতিকার: জন্ডিস হলে মূল কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হয়। পর্যাপ্ত বিশ্রাম, তরল খাবার, হালকা ও সহজপাচ্য খাদ্য গ্রহণ জরুরি। ভাইরাসজনিত জন্ডিসে বিশ্রাম ও পর্যাপ্ত পানি সহায়ক ভূমিকা রাখে।
• ভুল বিকল্পগুলোর বিশ্লেষণ:
Anemia (অ্যানিমিয়া): এটি রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতির কারণে হয়, বিলিরুবিন বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
Cyanosis (সায়ানোসিস): রক্তে অক্সিজেনের অভাবে ত্বক ও ঠোঁট নীলচে হয়, বিলিরুবিনের সঙ্গে সম্পর্ক নেই।
Clubbing: আঙুলের ডগা ফোলা ও নরম হওয়া, যা দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুস বা হৃদরোগে দেখা যায়, বিলিরুবিনের প্রভাব নয়।
সুতরাং রক্তে বিলিরুবিন বেড়ে গেলে জন্ডিস (Jaundice) হয়, যা লিভারের সমস্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক এবং শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার একটি দৃশ্যমান লক্ষণ।