‘কবর’ নাটকটি লেখা হয়েছে বাংলা ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে। নাট্যকার মুনীর চৌধুরী এই নাটকটি রচনা করেন ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত ঘটনার পরপরই। এর মাধ্যমে তিনি জাতির আত্মত্যাগ, প্রতিবাদ এবং ভাষার মর্যাদার জন্য সংগ্রামের চেতনা ফুটিয়ে তুলেছেন। নাটকটি প্রতীকী হলেও বাস্তব ঘটনাবলির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত।
নাটকটির পটভূমি ও ভাবার্থ বোঝার জন্য নিচের তথ্যগুলো গুরুত্বপূর্ণ—
• ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট: পাকিস্তান সরকার যখন উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেয়, তখন পূর্ব বাংলার মানুষ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। এই আন্দোলনের ফলেই ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভাষার অধিকারের জন্য রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটে, যেখানে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেকেই শহীদ হন।
• নাটক রচনার উদ্দেশ্য: মুনীর চৌধুরী তখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে তিনি কারাগারের ভেতরেই “কবর” নাটকটি লেখেন, যা প্রতিরোধ ও জাতীয় চেতনার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।
• প্রতীকী উপস্থাপনা: নাটকে কবরের ভেতর মৃত চরিত্রগুলোর সংলাপের মাধ্যমে জীবন্ত জাতির জাগরণ ও শহীদদের অমরতা তুলে ধরা হয়েছে। এটি শুধু শোকের নয়, বরং প্রতিবাদের নাটক—যেখানে মৃত্যু নতুন জীবনের জন্ম দেয়।
• সমাজ ও রাজনীতির প্রতিচ্ছবি: নাটকে শোষণ, অন্যায়, নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনতার কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হয়েছে। এটি কেবল ভাষার দাবিই নয়, বরং স্বাধীন চিন্তা ও জাতীয় মর্যাদার প্রতিরূপ।
• শিল্পগুণ ও বার্তা: নাটকটি সংক্ষিপ্ত হলেও ভাষা, প্রতীক ও আবেগে ভরপুর। এর প্রতিটি সংলাপ মানুষের মনের গভীরে দেশপ্রেম, প্রতিবাদ ও আত্মত্যাগের অনুপ্রেরণা জাগায়।
সব মিলিয়ে, ‘কবর’ নাটকটি ভাষা আন্দোলনেরই প্রতিচ্ছবি, যেখানে ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য আত্মদানকে অমরত্বের আসনে বসানো হয়েছে। এটি বাংলা নাট্যসাহিত্যের এক অনন্য সৃষ্টি, যা আজও আমাদের জাতীয় চেতনার অবিচ্ছেদ্য অংশ।