• ‘আটকপালে’ বাগ্‌ধারাটির অর্থ হলো হতভাগ্য ব্যক্তি।

অন্যদিকে,
• ‘উড়নচণ্ডী’ শব্দের অর্থ — অমিতব্যয়ী বা খরুচে ব্যক্তি।
• ‘ছা-পোষা’ অর্থ — অত্যন্ত গরিব বা সাদামাটা জীবনযাপনকারী।
• ‘ভূষণ্ডির কাক’ অর্থ — দীর্ঘজীবী বা দীর্ঘায়ু ব্যক্তি।

উৎস:
– ভাষা শিক্ষা, ড. হায়াৎ মামুদ
– বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, নবম-দশম শ্রেণি (২০১৯ সংস্করণ)

কপালকুণ্ডলা ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

উল্লেখযোগ্য সংলাপ:

• “তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন?” – এটি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি খ্যাতনামা সংলাপ।

কপালকুণ্ডলা উপন্যাস:

• প্রকাশকাল: ১৮৬৬

• লেখক: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

• এটি তার দ্বিতীয় উপন্যাস।

• কাহিনি কেন্দ্রিত কপালকুণ্ডলা নামের এক নিগূঢ় নারী চরিত্রের উপর।

• উপন্যাসে তার সমাজবদ্ধতা, নবকুমারের সঙ্গে বিয়ে, এবং সমাজের সঙ্গে দ্বন্দ্ব দেখানো হয়েছে।

• মূল থিম: কপালকুণ্ডলার রহস্য উদঘাটন।

• উল্লেখযোগ্য সংলাপ:

  • “পথিক তুমি পথ হারাইয়াছ” – বাংলা সাহিত্যের প্রথম রোমান্টিক সংলাপ হিসেবে গণ্য।

  • “তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন?”

• বিশেষত্ব: প্রকৃতির সৌন্দর্য, চরিত্রের রহস্যময়তা, এবং কাহিনির ট্র্যাজিক সমাপ্তি।

• সংস্করণ: বঙ্কিমচন্দ্র জীবদ্দশায় ৮টি সংস্করণ প্রকাশিত।

• নাট্য ও উপসংহার রূপান্তর:

  • গিরিশচন্দ্র ঘোষ নাট্যরূপে রূপান্তর (১৮৭৩)।

  • দামোদর মুখোপাধ্যায় উপন্যাসের উপসংহার লিখে ‘মৃন্ময়ী’ নামে প্রকাশ করেন।

উল্লেখযোগ্য চরিত্র:

• কপালকুণ্ডলা

• নবকুমার

• কাপালিক

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়: সংক্ষিপ্ত পরিচয়

• জন্ম: ১৮৩৮, কাঁঠালপাড়া, চব্বিশ পরগনা জেলা

• পেশা: ঔপন্যাসিক, সাংবাদিক, নবজাগরণের গুরুত্বপূর্ণ পুরুষ

• বাংলা উপন্যাসের জনক হিসেবে পরিচিত

• প্রথম কাব্যগ্রন্থ: ‘ললিতা তথা মানস’ (১৮৫৬)

• প্রথম উপন্যাস: ‘রাজমোহনস ওয়াইফ’ (ইংরেজিতে)

• বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস: ‘দুর্গেশনন্দিনী’ (১৮৬৫)

• প্রখ্যাত ত্রয়ী উপন্যাস: আনন্দমঠ, দেবী চৌধুরানী, সীতারাম

• মৃত্যু: ১৮৯৪

অন্যান্য উপন্যাস:

• কপালকুণ্ডলা, মৃণালিনী, বিষবৃক্ষ, ইন্দিরা, যুগলাঙ্গুরীয়, চন্দ্রশেখর, রাধারানী, রজনী, কৃষ্ণকান্তের উইল, রাজসিংহ

প্রবন্ধ রচনা:

• লোকরহস্য, কমলাকান্তের দপ্তর, বিবিধ সমালোচনা, সাম্য, কৃষ্ণচরিত্র, ধর্মতত্ত্ব অনুশীলন ইত্যাদি

উৎস: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, ড. সৌমিত্র শেখর, বাংলাপিডিয়া। 

‘ঢাক্ ঢাক্ গুড় গুড়’

• অর্থ: গোপন রাখার চেষ্টা।

• বিশেষ ব্যঞ্জনা: “ঢাক্ ঢাক্ গুড় গুড় করে কি লাভ, আসল কথাটি বল।” — অর্থাৎ অহেতুক গোপন না রেখে মূল কথা স্পষ্টভাবে বলা উচিত।

আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাগধারার উদাহরণ:

1. অনুরোধে ঢেঁকি গেলা – অনুরোধে কষ্ট স্বীকার।
   উদাহরণ: “অনুরোধে অনেক ঢেঁকি গিলেছি, এখন আর পারছি না।”

2. অন্ধকারে ঢিল ছোড়া – আন্দাজে কিছু করা।
   উদাহরণ: “অন্ধকারে ঢিল না ছুড়ে, আগে আসল ঘটনাটা জেনে এসো।”

3. অরণ্যে রোদন – নিষ্ফল অনুনয় বা আর্তি।
   উদাহরণ: “লোকটা হাড়কৃপণ, ওর কাছে কিছু চাওয়া আর অরণ্যে রোদন একই কথা।”

4. আকাশ ভেঙে পড়া – মহাবিপদে পড়া।
   উদাহরণ: “বন্যায় ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়ায় অনেক পরিবারের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে।”

5. আট কপালে – হতভাগ্য।
   উদাহরণ: “আট কপালের লোকের ভাগ্যে চাকরি জোটা খুবই মুশকিল।”

6. আঠারো মাসে বছর – ঢিলেমি বা ধীর গতি।
   উদাহরণ: “আমার মামা সব কাজেই দেরি করেন। সবাই বলেন, তার নাকি আঠারো মাসে বছর।”

7. আদাজল খেয়ে লাগা – সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করা।
   উদাহরণ: “পরীক্ষায় জিপিএ–৫ পাওয়ার জন্য মাহমুদ আদাজল খেয়ে লেগেছে।”

8. আদায় কাঁচকলায় – শত্রুভাবাপন্ন সম্পর্ক।
   উদাহরণ: “ওদের ভাইয়ে ভাইয়ে আদায় কাঁচকলায় সম্পর্ক, কেউ কাউকে সহ্য করে না।”

9. আবোল-তাবোল – এলোমেলো বা অপ্রাসঙ্গিক কথা।
   উদাহরণ: “আসল ঘটনা লুকোতে গিয়ে সে আবোল-তাবোল বকে চলেছে।”

10. আমড়া কাঠের চেঁকি – অকেজো লোক বা ব্যক্তি।
    উদাহরণ: “ও একটা আমড়া কাঠের চেঁকি, ওকে দিয়ে কাজটা হবে না।”

11. আমলে আনা – গুরুত্ব দেওয়া।
    উদাহরণ: “পুলিশ দারোয়ানের কোনো কথাই আমলে আনল না।”

12. আলালের ঘরের দুলাল – বড়লোকের আদুরে ও অলস ছেলে।
    উদাহরণ: “এই আলালের ঘরের দুলালটি কাজ দেখলে ভয় পায়।”

উৎস: বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, নবম-দশম শ্রেণি (২০১৯-সংস্করণ)