‘গাজী মিয়াঁর বস্তানী’ হলো মীর মশাররফ হোসেন রচিত একটি আত্মজীবনীমূলক রচনা, যা তাঁর কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা, সমাজচেতনা এবং সমকালীন সামাজিক বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটায়। এটি বাংলা সাহিত্যে আত্মজীবনমূলক ব্যঙ্গরচনার এক উজ্জ্বল নিদর্শন।
-
‘গাজী মিয়াঁর বস্তানী’ একটি কর্মজীবননির্ভর আত্মজীবনীমূলক রচনা, যা ১৯০০ সালে প্রকাশিত হয়।
-
এতে লেখক সমাজের অন্যায়, অনাচার, দুর্নীতি ও নৈতিক অধঃপতন ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে প্রকাশ করেছেন।
-
গ্রন্থটিতে লেখক নিজেকে ‘ভেড়াকান্ত’ নামে পরিচিত করেছেন, যা তাঁর আত্মপ্রকাশের একটি রূপক রূপ।
-
রচনাটির ভেতরে সমাজের অসঙ্গতি ও ভণ্ডামিকে হাস্যরসের মাধ্যমে উন্মোচন করা হয়েছে।
-
এতে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘কমলাকান্তের দপ্তর’-এর প্রভাব স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়।
-
লেখক তাঁর সাহিত্যিক পরিচয়, মানসিক ভাবনা এবং সমাজসংস্কারক দৃষ্টিভঙ্গি এই রচনার মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেছেন।
মীর মশাররফ হোসেন (১৮৪৭–১৯১১):
-
জন্ম: ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর, কুষ্টিয়া জেলার লাহিনীপাড়া গ্রামে।
-
তিনি ছিলেন উনিশ শতকের বাঙালি মুসলমান সাহিত্যিকদের পথিকৃৎ, এবং বঙ্কিমযুগের একজন প্রধান গদ্যশিল্পী।
-
তাঁর সাহিত্যিক জীবন শুরু হয় ছাত্রাবস্থায়, ‘সংবাদ প্রভাকর’ ও ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ পত্রিকার সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে।
-
তাঁর সাহিত্যগুরু ছিলেন ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’-র সম্পাদক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার।
-
তিনি পরবর্তীতে ‘আজিজননেহার’ ও ‘হিতকরী’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
-
সমাজ, ধর্ম, নৈতিকতা এবং মানবপ্রেম তাঁর সাহিত্যের মূল উপজীব্য।
-
তাঁর ছদ্মনাম ছিল ‘গাজী মিয়াঁ’।
-
তাঁর প্রথম গ্রন্থ ‘রত্নবতী’ (১৮৬৯), যা মুসলিম রচিত প্রথম বাংলা গদ্যগ্রন্থ হিসেবে ইতিহাসে স্থান পেয়েছে।
সাহিত্যকর্মসমূহ:
নাটক:
-
বসন্তকুমারী
-
জমিদার দর্পণ
-
বেহুলা গীতাভিনয়
-
টালা অভিনয়
উপন্যাস:
প্রহসন:
আত্মজীবনীমূলক রচনা:
-
উদাসীন পথিকের মনের কথা
-
গাজী মিয়াঁর বস্তানী
-
আমার জীবনী
-
কুলসুম জীবনী
অন্যান্য আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থের উদাহরণ:
-
ছেলেবেলা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
-
স্মৃতির শহর – শামসুর রাহমান
-
আমার ছেলেবেলা – হুমায়ূন আহমেদ
‘গাজী মিয়াঁর বস্তানী’-তে মীর মশাররফ হোসেন সমাজের ভণ্ডামি, ধর্মীয় কুসংস্কার ও নৈতিক অবক্ষয়কে ব্যঙ্গের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন, যা কেবল আত্মজীবনী নয়, বরং একটি যুগচেতনার প্রতিবিম্ব।