পঙ্ক্তি 'লুই ভণই গুরু পূছিঅ জাণ।' চর্যার কবি লুইপার রচনা। আধুনিক গদ্যে রূপান্তর করলে অর্থ দাঁড়ায়: লুই বলেন, “গুরুকে জিজ্ঞাসা করে জানো।” পঙ্ক্তিতে ব্যবহৃত শব্দগুলোর অর্থ হলো:
-
ভণই: বলে, প্রকাশ করে (ভণতি > ভণই)
-
পূছিঅ: জিজ্ঞাসা করে (পুচ্ছতিঃ > পুচ্ছিঅ > পূছিঅ)
-
জাণ: জানো (জানথ > জানহ > জাণঅ > জাণ)

লুইপা সম্পর্কিত তথ্য:
-
লুইপা 'চয্যাচর্যবিনিশ্চয়'-এর প্রথম কবি। তিব্বতি ঐতিহ্যে প্রাপ্ত চুরাশি জন সিদ্ধাচার্যের তালিকায় তার নাম আদিতম। তিনি চর্যার ১ ও ২৯নং পদের রচয়িতা।
-
অনেক পণ্ডিত তাকে প্রথম চর্যাগীতি রচয়িতা মনে করেন। তার জীবৎকাল ৭৩০–৮১০ খ্রিষ্টাব্দ, রাজা ধর্মপালের রাজত্বকাল। হিন্দিভাষীরা তাকে মগধ বা বিহারের অধিবাসী বলে দাবি করেন। যোগতন্ত্রশাস্ত্রেও লুইপার উল্লেখ রয়েছে।
-
তন্ত্রশাস্ত্রে লুইপার অন্য নাম মীননাথ বা মৎস্যেন্দ্রনাথ। মৎস্যের সঙ্গে নামের মিল থাকায় কিছু পণ্ডিত ১৮ চর্যাগীতি পাঠে তাকে শবরপা-এর শিষ্য ও ধীবর সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত মনে করেন।
-
লুইপা অনেকের মতে আদি সিদ্ধাচার্য, যিনি সকল সিদ্ধাচার্যের গুরু। সংস্কৃত টীকাকার মুনি দত্ত তাকে আদি সিদ্ধাচার্য বলেছেন। তবে, তারানাথের মতে লুইপা ছিলেন চতুর্থ সিদ্ধাচার্য, আর সরহ ছিলেন আদি সিদ্ধাচার্য। তিনি উড্ডীয়ান-রাজ উদয়নের কর্মচারী এবং শবরপা-র শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন।
-
চর্যাগীতির লুইপা ও তন্ত্রশাস্ত্রের লুইপা সম্ভবত ভিন্ন ব্যক্তি, কারণ চর্যাগীতির লুইপা গৌড় অঞ্চলের অধিবাসী, আর মীননাথ বা মৎস্যেন্দ্রনাথ দক্ষিণবঙ্গের গোরক্ষনাথের গুরু ছিলেন।
-
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মনে করেন লুইপা ছিলেন বাঙালি। রাহুল সাংস্কৃত্যায়ন অনুযায়ী, লুইপা রাজা ধর্মপালের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন।
-
তিব্বতি অনুবাদের মাধ্যমে তার বৌদ্ধ দর্শন বিষয়ক তিনটি গ্রন্থের নাম পাওয়া যায়: 'শ্রীভগবদভিসময়', 'অভিসময়বিভঙ্গ', ও 'তত্ত্বস্বভাবদোহাকোষগীতিকাদৃষ্টিনাম'।
চর্যার ১নং পদ:
কাআ তরুবার পঞ্চ বি ডাল।
চঞ্চল চীএ পইঠো কাল।।