টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা Sustainable Development Goals (SDGs) হলো একটি বৈশ্বিক উন্নয়ন কাঠামো, যা পৃথিবী থেকে দারিদ্র্য, ক্ষুধা, বৈষম্য ও পরিবেশগত সংকট দূর করার লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে। জাতিসংঘ ২০১৫ সালের ২৫-২৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত টেকসই উন্নয়ন সম্মেলনে এই লক্ষ্যমাত্রাগুলো গ্রহণ করে। এসডিজিতে মোট ১৭টি লক্ষ্য ও ১৬৯টি টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে, যার মেয়াদকাল ২০১৬ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত। এই লক্ষ্যমাত্রার মূল উদ্দেশ্য হলো পৃথিবীকে আরো টেকসই, ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নেওয়া।
এসডিজির প্রথম লক্ষ্য হলো দারিদ্র্য বিলোপ (Goal 1: No Poverty)। এই লক্ষ্যটি পৃথিবীর সর্বত্র দারিদ্র্যের নানা রূপের অবসান ঘটানোর উদ্দেশ্যে নির্ধারিত হয়েছে। এর অধীনে কয়েকটি নির্দিষ্ট উপলক্ষ্য বা টার্গেট রয়েছে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে।
লক্ষ্য ১: দারিদ্র্য বিলোপ
◉ ১.১: ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীর সব মানুষের জন্য দৈনিক মাথাপিছু আয় ১.২৫ মার্কিন ডলারের কম এমন চরম দারিদ্র্যের সম্পূর্ণ অবসান ঘটানো। এটি চরম দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সম্পূর্ণভাবে দারিদ্র্যমুক্ত করার লক্ষ্য নির্দেশ করে।
◉ ১.২: ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের সকল বয়সের নারী, পুরুষ ও শিশুর মধ্যে দারিদ্র্যের হার অন্তত অর্ধেকে নামিয়ে আনা। এটি দারিদ্র্যের বিস্তৃত রূপ— অর্থনৈতিক, সামাজিক ও জীবনমান সংক্রান্ত—সবকিছুকে অন্তর্ভুক্ত করে। অর্থাৎ শুধু আয় নয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও উন্নতি ঘটানোই এই অভীষ্টের উদ্দেশ্য।
◉ ১.৩: সকল মানুষের জন্য ন্যূনতম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং ২০৩০ সালের মধ্যে দরিদ্র ও অরক্ষিত জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অংশকে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় নিয়ে আসা।
◉ ১.৪: সকল নারী ও পুরুষের জন্য অর্থনৈতিক সম্পদ, মৌলিক সেবা, জমি ও সম্পত্তির মালিকানা, উত্তরাধিকার ও প্রযুক্তি ব্যবহারে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করা। এর মাধ্যমে দারিদ্র্যের প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য হ্রাস করা সম্ভব হবে।
◉ ১.৫: দারিদ্র্যপীড়িত জনগোষ্ঠীর অভিঘাতসহনশীলতা বৃদ্ধি করা এবং জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অর্থনৈতিক সংকটের মতো ঝুঁকি থেকে তাদের রক্ষা করা।
এসব লক্ষ্যের মাধ্যমে জাতিসংঘ এমন একটি পৃথিবী গড়ার আহ্বান জানিয়েছে যেখানে কেউ দারিদ্র্যের কারণে পিছিয়ে থাকবে না। বিশেষ করে ১.২ লক্ষ্যটি পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার মধ্যে দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে নামিয়ে আনার স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দেয়, যা টেকসই উন্নয়নের অন্যতম মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত।