অর্থগতভাবে শব্দসমূহ তিনটি ভাগে বিভক্ত করা যায়: যৌগিক শব্দ, রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ, এবং যোগরূঢ় শব্দ।
যৌগিক শব্দ:
এই ধরনের শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ এবং প্রচলিত অর্থের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না, অর্থাৎ উভয়ের অর্থ একরকম হয়। উদাহরণ হিসেবে, বাংলা শব্দ 'মিতালি' এর ব্যুৎপত্তিগত অর্থ 'মিতা' শব্দের পরে ‘ভাব’ অর্থে তদ্ধিত প্রত্যয় ‘আলি’ যোগে গঠিত হয়েছে, যা 'বন্ধুত্ব' বা 'মিতার ভাব' বুঝায়। ভাষায়ও এই অর্থেই শব্দটি ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ, 'মিতালি' শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত এবং ব্যবহারিক অর্থ এক, তাই এটি একটি যৌগিক শব্দ। অন্যান্য উদাহরণ হিসেবে গায়ক, কর্তব্য, বাবুয়ানা, মধুর, দৌহিত্র, চিকামারা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ:
এ ধরনের শব্দগুলোর অর্থ তাদের প্রকৃতি ও প্রত্যয়ের অর্থ অনুসারে নয়, বরং ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে। যেমন: গবেষণা, তৈল, প্রবীণ, সন্দেশ, জেঠামি, বাঁশি ইত্যাদি। এই শব্দগুলোর ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহৃত অর্থের মধ্যে ফারাক থাকে।
যোগরূঢ় শব্দ:
যে শব্দগুলো সমাসনিষ্পন্ন হয়ে তাদের ব্যাসবাক্যের কোন অর্থ প্রকাশ না করে, বরং তৃতীয় একটি অর্থ প্রকাশ করে, সেগুলো যোগরূঢ় শব্দ। যেমন 'পঙ্কজ', যার ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল 'পঙ্কে জন্মে যা', কিন্তু এটি শুধুমাত্র 'পদ্মফুল' অর্থেই ব্যবহৃত হয়। তাই, 'পঙ্কজ' একটি যোগরূঢ় শব্দ। তেমনি, 'শাখামৃগ' শব্দটির ব্যবহৃত অর্থ 'বানর' হলেও এর ব্যুৎপত্তিগত অর্থ 'শাখা' ও 'মৃগ' শব্দের মিশ্রণ, যার মাধ্যমে এটি কিছু বিশেষ প্রাণীকে নির্দেশ করে। এই ধরনের শব্দগুলো আরো অনেক হতে পারে, যেমন মন্দির, জলদ, রাজপুত, জলধি, মহাযাত্রা ইত্যাদি।
অন্যদিকে, ‘মলম’ ও ‘কলম’ শব্দ দুটি আরবি ভাষা থেকে এসেছে এবং এদের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও প্রচলিত অর্থ একই, সুতরাং এগুলো যৌগিক শব্দের অন্তর্ভুক্ত।