বাংলা ভাষায় ‘বর্ণচোরা’ শব্দটি একটি সমাস, যা দুটি বা তার বেশি শব্দকে একত্র করে নতুন অর্থ তৈরি করে। এটি বিশেষভাবে উপপদ তৎপুরুষ সমাস-এর উদাহরণ, কারণ এখানে দুটি পদ আছে — ‘বর্ণ’ এবং ‘চোরা’, যেখানে প্রথম পদটি (বর্ণ) দ্বিতীয় পদের (চোরা)-কে নির্দিষ্ট করে বা সীমাবদ্ধ করে অর্থ প্রদান করছে।
বিস্তারিত ব্যাখ্যা:
উপপদ তৎপুরুষ সমাসের সংজ্ঞা:
-
উপপদ তৎপুরুষ সমাস হলো এমন সমাস যেখানে প্রথম পদটি দ্বিতীয় পদকে বিশেষভাবে নির্দিষ্ট বা সীমাবদ্ধ করে।
-
অর্থাৎ, প্রথম পদটি second part-এর উপপদ বা অংশ হিসেবে কাজ করে, যাতে মিলিতভাবে একটি নির্দিষ্ট অর্থ তৈরি হয়।
-
উদাহরণস্বরূপ: গোপালচন্দ্র, রামচক্র—এখানে প্রথম অংশ দ্বিতীয় অংশের বর্ণনা বা সীমা নির্ধারণ করছে।
‘বর্ণচোরা’ শব্দের বিশ্লেষণ:
-
বর্ণ → আক্ষরিক অর্থে কোনো ধ্বনিবর্ণ বা অক্ষর।
-
চোরা → চুরি বা চুরি করা ব্যক্তি বা বস্তু।
-
মিলিত হয়ে ‘বর্ণচোরা’ অর্থ দাঁড়ায় এমন ব্যক্তি বা বস্তু যা বর্ণ চুরি করে।
-
এখানে ‘বর্ণ’ শব্দটি ‘চোরা’ ক্রিয়ার বা বিশেষণীয় কার্যক্রমকে সীমাবদ্ধ করছে, অর্থাৎ এটি উপপদ হিসেবে দ্বিতীয় পদকে নির্দিষ্ট করছে, যা উপপদ তৎপুরুষ সমাস-এর মূল বৈশিষ্ট্য।
অন্য সমাসের সঙ্গে তুলনা:
-
বহুব্রীহি (ক): এমন সমাস যেখানে মিলিত অর্থে কোনো পদই সরাসরি উল্লেখিত না থাকে। যেমন: চন্দ্রকান্ত—যার অর্থ হলো “চাঁদের মত সুন্দর”।
-
রূপক কর্মধারয় (খ) ও উপমান কর্মধারয় (ঘ): এগুলো কর্মধারয় বা তুলনামূলক সমাস, যা ক্রিয়া বা তুলনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি। “বর্ণচোরা” এগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
সারসংক্ষেপ:
-
বর্ণচোরা শব্দটি দুটি পদ মিলিয়ে তৈরি।
-
প্রথম পদ ‘বর্ণ’ দ্বিতীয় পদ ‘চোরা’-কে নির্দিষ্ট করে।
-
এটি একটি স্বতন্ত্র অর্থ বহন করে।
-
তাই এটি উপপদ তৎপুরুষ সমাস-এর উদাহরণ।
উপসংহার:
“বর্ণচোরা” শব্দটি সমাসবিজ্ঞান অনুযায়ী (গ) উপপদ তৎপুরুষ অন্তর্ভুক্ত, কারণ এটি এমন সমাস যেখানে প্রথম পদটি দ্বিতীয় পদকে নির্দিষ্ট বা সীমাবদ্ধ করে নতুন অর্থ তৈরি করছে।