বাংলা লোকসাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ময়মনসিংহ গীতিকা, যেখানে বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনের প্রেম, বেদনা, সংগ্রাম ও সামাজিক মূল্যবোধ গভীরভাবে প্রকাশ পেয়েছে। এই গীতিকাগুলোর সংরক্ষণ ও প্রকাশের কৃতিত্ব মূলত চন্দ্রকুমার দে-র, যিনি অক্লান্ত পরিশ্রমে লোকমুখে প্রচলিত এই গানগুলো সংগ্রহ করে সাহিত্যের অমূল্য সম্পদে পরিণত করেন।
চন্দ্রকুমার দে ছিলেন একজন নিষ্ঠাবান লোকসাহিত্য গবেষক ও সংগ্রাহক। তিনি বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি গভীর অনুরাগ থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে লোকগীতি সংগ্রহ করেন। তাঁর সংগ্রহ করা গানগুলো পরে ময়মনসিংহ গীতিকা নামে খ্যাতি পায় এবং বাংলা সাহিত্যে বিশেষ স্থান অধিকার করে।
প্রধান তথ্যসমূহ:
-
চন্দ্রকুমার দে ছিলেন ময়মনসিংহ জেলার মানুষ এবং লোকসাহিত্য সংগ্রহে তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল।
-
তিনি লোককথা, বীরগাথা ও প্রেমকাহিনি সমৃদ্ধ গানগুলো সংগ্রহ করেন, যার মধ্যে “মহুয়া”, “চাঁদবিবি”, “মালুয়া”, “দেউয়ান ভাটিরু”, “চন্দ্রাবতী” প্রভৃতি গীতিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
-
এই গীতিকাগুলিতে প্রাকৃতিক পরিবেশ, গ্রামীণ সমাজব্যবস্থা ও সাধারণ মানুষের আবেগ অত্যন্ত জীবন্তভাবে ফুটে উঠেছে।
-
চন্দ্রকুমার দে তাঁর সংগৃহীত গানগুলো ১৯২৩ সালে প্রথম প্রকাশ করেন, যা পরবর্তীতে বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদে পরিণত হয়।
-
তাঁর সংগ্রহের গুরুত্ব অনুধাবন করে দীনেশচন্দ্র সেন পরবর্তীতে “Eastern Bengal Ballads” নামে ইংরেজিতে অনুবাদ ও সংকলন করেন। তবে মূল সংগ্রাহক ছিলেন চন্দ্রকুমার দে।
-
ময়মনসিংহ গীতিকা বাংলা লোকসাহিত্যের “Epic Ballads” হিসেবে পরিচিত, যেখানে বাঙালি জীবনের রোমান্টিক ও নায়কোচিত দিকগুলো অনন্যভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
-
এই গীতিকার মাধ্যমে বাঙালি জাতির আবেগ, ভালোবাসা, এবং সমাজব্যবস্থার ঐতিহ্য সংরক্ষিত হয়েছে, যা আজও লোকসংস্কৃতির গবেষণায় অনন্য দৃষ্টান্ত।
-
চন্দ্রকুমার দে-র এই অবদান বাংলা লোকসাহিত্যের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে, কারণ তাঁর সংগ্রহ ছাড়া এই গীতিকাগুলো সময়ের সঙ্গে হারিয়ে যেত।
সুতরাং, ময়মনসিংহ গীতিকার প্রকৃত সংগ্রাহক ছিলেন চন্দ্রকুমার দে, আর তাঁরই সংগ্রহ বাংলা সাহিত্যে এক অমূল্য ঐতিহ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।