উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্য ও শ্রেণীবিভাগ লিখ

Shihabur Rahman
উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্য ও শ্রেণীবিভাগ লিখ।
ভূমিকা: সংবিধান একটি রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তি যা সরকার পরিচালনার
কাঠামো নির্ধারণ করে। উত্তম সংবিধান হলো এমন একটি সংবিধান, যা রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা,
নাগরিকদের অধিকার, শাসনব্যবস্থার কার্যকারিতা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে। এটি সাধারণত
সুসংহত, সুস্পষ্ট ও কার্যকর হয়ে থাকে। সংবিধানের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও শ্রেণীবিভাগ
রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার ধরণ ও প্রয়োগের ওপর নির্ভর করে।
ড:
বেডারলিন (Dr. Bedarlin) বলেন "উত্তম সংবিধান
হলো একটি সুসংহত, স্থিতিশীল এবং নাগরিকদের মৌলিক অধিকার এবং স্বাধীনতা সুরক্ষিত রাখার
জন্য যে সাংবিধানিক ব্যবস্থা কাজ করে, তা সরকার ও জনগণের মধ্যে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক
গড়ে তোলে।"
উত্তম
সংবিধানের বৈশিষ্ট্য: উত্তম সংবিধানের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যথা নিম্নরূপ;
১.
সুস্পষ্টতা ও সংক্ষিপ্ততা:
উত্তম সংবিধান সংক্ষিপ্ত অথচ সুস্পষ্ট ভাষায় প্রণীত হয়। এতে আইনের ভাষা সহজ ও বোধগম্য
হওয়া প্রয়োজন, যাতে সাধারণ নাগরিক ও আইনবিদ উভয়েই তা সহজে বুঝতে পারেন। জটিল ও দ্ব্যর্থবোধক
সংবিধান শাসনব্যবস্থায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে।
২.
নমনীয়তা ও দৃঢ়তা: উত্তম সংবিধান
পরিবর্তনযোগ্য হলেও এতে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। উক্ত সংবিধানের গঠনতন্ত্রে প্রয়োজনীয়
সংস্কারের সুযোগ থাকবে তবে সংস্কারের ফলে মূল কাঠামো নষ্ট হবে না।
৩.
মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণ: উত্তম
সংবিধানে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার যেমন; বাকস্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সমতার অধিকার
ইত্যাদি নিশ্চিত করে। এটি গণতান্ত্রিক শাসনের মূল ভিত্তি হিসেবে রাষ্ট্রের নাগরিকদের
ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার সুরক্ষা প্রদান করে।
৪.
ক্ষমতার ভারসাম্য ও নিয়ন্ত্রণ: উত্তম
সংবিধান রাষ্ট্রের তিনটি প্রধান শাখা যেমন; বিচারব্যবস্থা, নির্বাহী ও আইনসভা—এর মধ্যে
যথাযথ ভারসাম্য বজায় রাখে। এটি কোনো একক শাখাকে স্বৈরাচারী ক্ষমতা গ্রহণ করতে দেয় না
এবং শাসনের স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা বজায় রাখে।
৫.
জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ: গণতান্ত্রিক
রাষ্ট্রব্যবস্থায় উত্তম সংবিধান জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে। এতে জনগণের মতপ্রকাশের
অধিকার, নির্বাচন প্রক্রিয়া ও নাগরিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট বিধান
সন্নিবেশিত থাকে।
৬.
ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা: উত্তম
সংবিধান আইন ও ন্যায়বিচারের শাসন নিশ্চিত করে। এটি ব্যক্তির স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষা
করে এবং সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করে।
৭.
সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার: উত্তম
সংবিধান শুধু রাজনৈতিক দিক নয়, বরং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের দিকেও গুরুত্ব
দেয়। এটি দরিদ্র, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও সংখ্যালঘুদের অধিকার সংরক্ষণে সহায়ক ভূমিকা
পালন করে।
৮.
জাতীয় ঐক্য ও অখণ্ডতা: একটি
উত্তম সংবিধান দেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখে। এটি জাতীয়
স্বার্থকে সুরক্ষা দেয় এবং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে।
সংবিধানের
শ্রেণীবিভাগ: সংবিধানকে বিভিন্নভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা
যায়। সাধারণত এটি লিখিত ও অলিখিত, নমনীয় ও কঠোর, একক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রভৃতি ভাগে
বিভক্ত করা হয়।
❖
লিখিত সংবিধান:
লিখিত নথির আকারে গৃহীত সংবিধান, যেমন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সংবিধান।
❖
অলিখিত সংবিধান:
প্রচলিত রীতিনীতির ওপর ভিত্তি করে গঠিত, যেমন যুক্তরাজ্যের সংবিধান।
❖
নমনীয় সংবিধান:
সহজে পরিবর্তনযোগ্য সংবিধান, যেমন যুক্তরাজ্যের সংবিধান।
❖
কঠোর সংবিধান:
পরিবর্তনের জন্য বিশেষ প্রক্রিয়া প্রয়োজন, যেমন বাংলাদেশের সংবিধান।
উপসংহার: উত্তম সংবিধান রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি।
এটি জনগণের অধিকার নিশ্চিত করে, সরকার পরিচালনার কাঠামো নির্ধারণ করে এবং আইনশৃঙ্খলা
বজায় রাখে। একে যুগোপযোগী ও কার্যকর রাখার জন্য সময় অনুযায়ী সংশোধন প্রয়োজন। একটি শক্তিশালী
ও ন্যায়সঙ্গত সংবিধানই একটি সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি।
12
সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণী বলতে কি বুঝ?

Shihabur Rahman
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কি?

Shihabur Rahman
মরণশীলতা ও প্রজননশীলতা বলতে কি বুঝ?

Shihabur Rahman
উপনিবেশবাদ কি?

Shihabur Rahman
গ্রামীণ সমাজের / সম্প্রদায়ের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট ব্যাখ্যা কর।
