সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতি কি? 

সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতি কি? 

ভূমিকা: সমাজকর্ম পেশার প্রধান উদ্দেশ্য হলো মানুষের কল্যাণ সাধন এবং সামাজিক সমস্যার সমাধান করা। সমাজকর্মীরা বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে ব্যক্তির, দলের এবং সমষ্টির সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেন। সমাজকর্মের পদ্ধতিগুলোর মধ্যে মৌলিক পদ্ধতি হলো সেই পদ্ধতিগুলো, যা সমাজকর্মীরা সরাসরি প্রয়োগ করে থাকেন। এই মৌলিক পদ্ধতিগুলোর সাথে সহায়ক বা সাহায্যকারী পদ্ধতিগুলোও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত, যা সমাজকর্মের কার্যকরীতা এবং সমস্যার সমাধানের প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে।

সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতি:

সমাজকর্মের তিনটি মৌলিক পদ্ধতি রয়েছে, যা সমস্যা সমাধানের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এই পদ্ধতিগুলো হলো:

১. ব্যক্তি সমাজকর্ম (Case Work): ব্যক্তি সমাজকর্ম হলো সেই পদ্ধতি, যা ব্যক্তির ব্যক্তিগত সমস্যার সমাধানের জন্য প্রয়োগ করা হয়। সমাজকর্মী ব্যক্তিগত পর্যায়ে মানুষের মানসিক, সামাজিক এবং শারীরিক সমস্যার সমাধান করতে সহায়তা করেন। এটি মূলত একক ব্যক্তির সাথে কাজ করার প্রক্রিয়া, যেখানে ব্যক্তির সমস্যা বিশ্লেষণ করে তা সমাধানের জন্য সাহায্য করা হয়।

আরো পড়ুনঃ সমাজ সংস্কার কাকে বলে?

উদাহরণ: একজন সমাজকর্মী যদি মাদকাসক্ত ব্যক্তির সমস্যা সমাধানের জন্য তাকে মানসিক সহায়তা ও পরামর্শ দেন, তবে এটি ব্যক্তি সমাজকর্মের উদাহরণ।

২. দল সমাজকর্ম (Group Work): দল সমাজকর্মে সমাজকর্মী দলগত সমস্যার সমাধানের জন্য দলকে সংগঠিত করেন। এই পদ্ধতিতে দলের সদস্যদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে দলগত উন্নয়নের চেষ্টা করা হয়।

উদাহরণ: একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে সমাজকর্মীরা মাদকাসক্তদের নিয়ে একটি দল গঠন করেন, যেখানে তারা একে অপরকে সমর্থন এবং অনুপ্রেরণা দিয়ে সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে।

৩. সমষ্টি সমাজকর্ম (Community Work): সমষ্টি সমাজকর্ম এমন একটি পদ্ধতি, যা সমষ্টিগত সমস্যার সমাধানের জন্য সমাজের বিভিন্ন অংশের সদস্যদের একত্রিত করে। এটি বৃহত্তর পরিসরে কাজ করে, যেখানে সমাজের সদস্যদের সমস্যা সমাধানের জন্য কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

আরো পড়ুনঃ সমষ্টি উন্নয়ন পদ্ধতি কি?

উদাহরণ: গ্রামীণ এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে একটি সমষ্টি গঠন করে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।

সমাজকর্মের মৌলিক ও সাহায্যকারী পদ্ধতিগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক:

সমাজকর্মের মৌলিক এবং সাহায্যকারী পদ্ধতিগুলোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। উভয়ের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের কিছু দিক নিম্নরূপ:

১. সমস্যা সমাধানে সহযোগীতা: সমাজকর্মীরা মৌলিক পদ্ধতি প্রয়োগের সময় সাহায্যকারী পদ্ধতিগুলোর ওপর নির্ভর করেন। যেমন, একটি গ্রামে সমষ্টিগত উন্নয়নের জন্য যদি সমাজকর্মী একটি প্রকল্প পরিচালনা করেন, তবে তা বাস্তবায়নের জন্য সমাজবিজ্ঞানী গবেষণা এবং প্রশাসনিক সহায়তা অপরিহার্য হয়ে ওঠে।

২. অভিন্ন লক্ষ্য: সমাজকর্মের মৌলিক এবং সাহায্যকারী পদ্ধতিগুলোর লক্ষ্য একই, যেমন দারিদ্র্য দূরীকরণ, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা প্রদান ইত্যাদি। মৌলিক পদ্ধতি সমস্যার সরাসরি সমাধান দেয়, আর সাহায্যকারী পদ্ধতি মৌলিক পদ্ধতিকে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে সহায়তা করে।

আরো পড়ুনঃ সামাজিক গবেষণার প্রয়োজনীয়তা

৩. তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ: সমাজকর্মীরা ব্যক্তিগত, দলগত এবং সমষ্টিগত পর্যায়ে কাজ করার সময় সঠিক তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন হয়। এই তথ্য সংগ্রহের জন্য সমাজ গবেষণার সাহায্য প্রয়োজন হয়, যা সাহায্যকারী পদ্ধতির অংশ।

৪. নীতি মেনে চলা: মৌলিক পদ্ধতিগুলোতে কাজ করার সময় সমাজকর্মীদের অবশ্যই কিছু নির্দিষ্ট নীতি মেনে চলতে হয়, যেমন ব্যক্তি মর্যাদার স্বীকৃতি, গণতান্ত্রিক অধিকার, এবং সামাজিক দায়িত্ব। সাহায্যকারী পদ্ধতিগুলো মৌলিক পদ্ধতিতে এই নীতিগুলো মেনে চলার প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে।

৫. সমস্যা সমাধানের সমন্বয়: সমাজকর্মীরা যখন ব্যক্তির সমস্যা সমাধান করেন, তখনও তাকে সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং বৃহত্তর সমাজের সাথে সমন্বয় করতে হয়। এক্ষেত্রে, সাহায্যকারী পদ্ধতি যেমন প্রশাসনিক ও গবেষণার সহায়তা প্রদান করে, তেমনি মৌলিক পদ্ধতির সফল প্রয়োগ নিশ্চিত করে।

উপসংহার: সমাজকর্মের মৌলিক এবং সাহায্যকারী পদ্ধতিগুলো একে অপরের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। মৌলিক পদ্ধতি সরাসরি সমস্যা সমাধানে ব্যবহৃত হয়, আর সাহায্যকারী পদ্ধতিগুলো এই মৌলিক পদ্ধতির কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। এভাবেই উভয়ের সম্মিলিত প্রয়াসে সমাজের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত হয়।

Shihabur Rahaman
Shihabur Rahaman

Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

Articles: 252