বাংলাদেশে শিল্পায়নের প্রতিবন্ধকতা সমূহ চিহ্নিত কর।

Shihabur Rahman
বাংলাদেশে
শিল্পায়নের প্রতিবন্ধকতা সমূহ চিহ্নিত কর।
ভূমিকা: শিল্পায়ন একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি।
এটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, উৎপাদন বাড়ায় এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করে। বাংলাদেশ
কৃষিনির্ভর অর্থনীতি থেকে ধীরে ধীরে শিল্পোন্নয়নের দিকে এগোচ্ছে। তবে শিল্প খাতে নানা
সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা এর অগ্রগতিকে ব্যাহত করছে। পর্যাপ্ত অবকাঠামো, দক্ষ
জনশক্তি, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, বিনিয়োগ সুবিধা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকায়
শিল্পায়নের গতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এই প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে যথাযথ পরিকল্পনা ও
উদ্যোগ প্রয়োজন।
১.
অবকাঠামোগত দুর্বলতা: শিল্প
উন্নয়নের জন্য ভালো সড়ক, রেলপথ, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ প্রয়োজন। বাংলাদেশে
এসব অবকাঠামোর অভাব রয়েছে। বিশেষ করে অনেক শিল্প এলাকা বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটে ভুগছে।
সঠিক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় উৎপাদিত পণ্য পরিবহন ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ হয়ে
পড়ে।
২.
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট: শিল্প
কারখানা চালানোর জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানির প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে
বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে। অনেক কারখানাকে লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন কমাতে হয়।
গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় অনেক নতুন শিল্প কারখানা চালু করা সম্ভব হয় না।
৩.
দক্ষ জনশক্তির অভাব: শিল্প
খাতে দক্ষ কর্মীর সংখ্যা কম। অনেক শ্রমিকের প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ নেই। ফলে
উৎপাদনশীলতা কম থাকে। প্রশিক্ষিত শ্রমিকের অভাবে অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা
সম্ভব হয় না।
৪.
বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতা: দেশীয়
ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হলে ভালো নীতিমালা ও সুবিধা থাকতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশে
শিল্প খাতে বিনিয়োগ করতে হলে অনেক জটিলতা পার করতে হয়। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দুর্নীতি
ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করে।
৫.
রাজনৈতিক অস্থিরতা: রাজনৈতিক অস্থিরতা
ও হরতালের কারণে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হয়। হরতাল, অবরোধ ও সংঘর্ষের কারণে অনেক শিল্প
প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় বা লোকসানের মুখে পড়ে। এতে দেশীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের
আস্থা কমে যায়।
৬.
ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার ও আর্থিক সংকট: শিল্প স্থাপনের জন্য ঋণ দরকার, কিন্তু ব্যাংকের সুদহার বেশি
হওয়ায় অনেকে ঋণ নিতে পারে না। ছোট ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা সহজে ঋণ পায় না। অনেক
সময় ঋণ পেতে হলে ঘুষ বা অন্যান্য ঝামেলা পোহাতে হয়।
৭.
আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দুর্নীতি: শিল্প
খাতে বিভিন্ন অনুমতি ও লাইসেন্স নিতে হয়, যা বেশ জটিল ও সময়সাপেক্ষ। অনেক ক্ষেত্রে
দুর্নীতির কারণে কাজ দ্রুত হয় না। ঘুষ ছাড়া অনেক উদ্যোক্তাই তাদের শিল্প প্রতিষ্ঠানের
কাজ এগিয়ে নিতে পারে না।
৮.
ভূমি সংকট ও উচ্চমূল্য: শিল্প
কারখানা গড়ার জন্য পর্যাপ্ত জমি প্রয়োজন, কিন্তু বাংলাদেশে শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য
পর্যাপ্ত সস্তা জমি পাওয়া কঠিন। জমির মূল্য অনেক বেশি হওয়ায় অনেক উদ্যোক্তা শিল্প
স্থাপন করতে পারে না।
৯.
প্রযুক্তির অভাব ও গবেষণার সীমাবদ্ধতা: শিল্প উন্নতির জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার দরকার। কিন্তু
বাংলাদেশে উন্নত প্রযুক্তির অভাব রয়েছে। গবেষণা ও উন্নয়নের (R&D) জন্য পর্যাপ্ত
বিনিয়োগ না থাকায় নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন কম হচ্ছে। ফলে শিল্প খাতে উন্নয়নের
গতি কম।
১০.
আমদানিনির্ভর কাঁচামাল: বাংলাদেশের
অনেক শিল্প কারখানা কাঁচামালের জন্য বিদেশের ওপর নির্ভরশীল। আমদানি খরচ বেশি হওয়ায়
উৎপাদন ব্যয়ও বেশি হয়ে যায়। এতে দেশীয় শিল্প প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে।
১১.
কর ও শুল্কের উচ্চহার: শিল্প
খাতকে উৎসাহিত করতে কর ও শুল্ক সুবিধা দেওয়া দরকার। কিন্তু বাংলাদেশে করের হার অনেক
বেশি। অনেক শিল্প উদ্যোক্তাকে উচ্চ হারে শুল্ক ও কর দিতে হয়, যা শিল্পায়নের জন্য
বড় বাধা।
১২.
পরিবেশগত প্রতিবন্ধকতা ও আইনগত বাধা: শিল্প
কারখানার কারণে পরিবেশদূষণ বাড়ছে, তাই সরকার কঠোর পরিবেশ আইন চালু করেছে। কিন্তু অনেক
শিল্প কারখানার জন্য এসব আইন বাস্তবায়ন করা কঠিন। অন্যদিকে, কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান
আইন মানছে না, যার ফলে নতুন নতুন বিধিনিষেধ আসছে।
১৩.
রপ্তানি সমস্যা ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা: বাংলাদেশের শিল্প খাতকে টিকিয়ে রাখতে রপ্তানির সুযোগ বাড়াতে
হবে। কিন্তু অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে পারে না। ফলে বৈশ্বিক
প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে। এছাড়া, বিদেশি বাজারে প্রবেশ করতে নানা বাধা ও শুল্ক
সমস্যা রয়েছে।
১৪.
শিল্প নীতির দুর্বলতা ও পরিকল্পনার অভাব: শিল্প খাতের সঠিক নীতিমালা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব রয়েছে।
বিভিন্ন সময়ে শিল্প নীতিতে পরিবর্তন আনা হয়, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য অনিশ্চয়তা
তৈরি করে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না থাকায় শিল্পের টেকসই উন্নয়ন হয় না।
১৫.
শ্রমিক অসন্তোষ ও আইনগত জটিলতা: শিল্প
খাতে শ্রমিক অসন্তোষ একটি বড় সমস্যা। মজুরি, কাজের পরিবেশ, বেতন পরিশোধে দেরি ইত্যাদি
কারণে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। অনেক সময় ধর্মঘট ও বিক্ষোভের কারণে শিল্প উৎপাদন
ব্যাহত হয়।
১৬.
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নে সমস্যা: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা রাখে। কিন্তু এ খাতের উদ্যোক্তারা পর্যাপ্ত ঋণ, প্রশিক্ষণ ও সুযোগ-সুবিধা পায়
না। ফলে তারা বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে না।
উপসংহার:
শিল্প খাতের উন্নতি ছাড়া বাংলাদেশের
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সম্ভব নয়। শিল্পায়নের পথে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে
হলে অবকাঠামো উন্নয়ন, দক্ষ জনশক্তি তৈরি, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি ও রাজনৈতিক
স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি গবেষণা ও প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটাতে হবে। সরকার
ও বেসরকারি খাত একসঙ্গে কাজ করলে বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হতে
পারবে।
3
সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণী বলতে কি বুঝ?

Shihabur Rahman
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কি?

Shihabur Rahman
মরণশীলতা ও প্রজননশীলতা বলতে কি বুঝ?

Shihabur Rahman
উপনিবেশবাদ কি?

Shihabur Rahman
গ্রামীণ সমাজের / সম্প্রদায়ের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট ব্যাখ্যা কর।
