সামাজিক মর্যাদা কি?

Avatar

Shihabur Rahman

Academic

সামাজিক মর্যাদা কি? শ্রেণী ও জাতি বর্ণের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় কর।

ভূমিকা: সামাজিক মর্যাদা হলো সমাজে একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সম্মান ও গুরুত্ব, যা তার কাজ, আচরণ, পারিবারিক পরিচিতি, অর্থনৈতিক অবস্থা ও শিক্ষার ওপর নির্ভর করে। উচ্চ মর্যাদার মানুষ সমাজে বেশি সম্মান ও সুযোগ সুবিধা পায়, আর নিম্ন মর্যাদার মানুষ তুলনামূলক কম সম্মান পায়। এটি শ্রেণী, জাতি, ধর্ম ও পেশার মতো বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং সমাজের মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়।

 

সামাজিক মর্যাদার প্রামাণ্য সংজ্ঞা: সংখ্যাম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) বলেন, "সামাজিক মর্যাদা হলো মানুষের সামাজিক শ্রেণী বা অবস্থান, যা তার জীবনের মান, কাজ এবং সমাজে তার অবস্থান দ্বারা নির্ধারিত হয়। এটি সমাজে নির্দিষ্ট শ্রেণীভুক্ত ব্যক্তির মর্যাদা ও সম্মান প্রাপ্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।"

 

এমিল দুর্কেইম (Émile Durkheim) এর মতে, "সামাজিক মর্যাদা সমাজের রীতিনীতি এবং অভ্যন্তরীণ নীতির ভিত্তিতে সৃষ্টি হয়, যেখানে সমাজের সদস্যরা একে অপরকে সম্মান প্রদর্শন করে। সামাজিক মর্যাদা হল সেই সম্মান ও মর্যাদা যা মানুষ পায় তার সামাজিক সম্পর্ক এবং কাজের মাধ্যমে।"

 

টলকট পার্সনস (Talcott Parsons) বলেন, "সামাজিক মর্যাদা হলো ব্যক্তির সমাজে তার অবদান এবং অন্যান্যদের সঙ্গে সম্পর্কের দ্বারা নির্ধারিত এক ধরনের মূল্যায়ন। সমাজের মধ্যে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং একে অপরের মধ্যে সহযোগিতা সৃষ্টি করতে সামাজিক মর্যাদা অপরিহার্য।"

 

শ্রেণী ও জাতি-বর্ণের পরিচয়:

শ্রেণী (Class): শ্রেণী হলো মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থান, জীবনযাত্রার মান এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে গঠিত একটি শ্রেণিবিন্যাস। এটি সাধারণত মানুষের আয়ের পরিমাণ, শিক্ষা, পেশা, সম্পদ এবং সামাজিক অবস্থানের ওপর নির্ভর করে। শ্রেণী সমাজে পার্থক্য সৃষ্টি করে । শ্রেণীর মূলত তিন ধরনের হয়ে থাকে : উচ্চ শ্রেণী, মধ্য শ্রেণী, এবং নিম্ন শ্রেণী।

 

জাতি-বর্ণ (Caste): জাতি বা বর্ণ হলো মানুষের সামাজিক ভাগ, যা জন্ম থেকেই নির্ধারিত হয়। এটি মূলত ধর্ম ও সংস্কৃতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। সমাজে জাতি বা বর্ণ অনুযায়ী পার্থক্য দেখা যায়। হিন্দু সমাজে পুরনো জাতিভেদ প্রথায় ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রদের আলাদা মর্যাদা ও অধিকার দেওয়া হয়। এটি সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করে।

 

শ্রেণী ও জাতি-বর্ণের মধ্যে পার্থক্য

১। সামাজিক ভিত্তি: শ্রেণী নির্ধারিত হয় আয়, শিক্ষা ও পেশার ভিত্তিতে। পক্ষান্তরে, জাতি বা বর্ণ জন্মগত ও সংস্কৃতির ওপর নির্ভর করে।

২। পরিবর্তনের সুযোগ:  শিক্ষা ও আয় আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে শ্রেণী পরিবর্তন করা যায়। কিন্তু জাতি বা বর্ণ পরিবর্তন করা খুব কঠিন।

৩। সমাজে প্রভাব: শ্রেণী মানুষের আয় ও জীবনযাত্রার মান নির্ধারণ করে। পক্ষান্তরে, জাতি বা বর্ণ ধর্ম ও সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত থাকে।

৪। পরিবর্তনশীলতা: সময়ের সাথে সাথে শ্রেণী পরিবর্তন হতে পারে। অপরদিকে, জাতি বা বর্ণ সাধারণত স্থায়ী হয়।

৫। সম্পর্ক ও বিভেদ: শ্রেণী পার্থক্য ধনী ও গরিব তৈরি করে। আর জাতি বা বর্ণের কারণে সামাজিক বৈষম্য তৈরি হয়।

৬। অধিকার ও সুযোগ: উচ্চ শ্রেণীর মানুষ বেশি সুযোগ সুবিধা পায়। অপরদিকে কিছু জাতি বা বর্ণ সমাজে বিশেষ মর্যাদা প্রাপ্ত হয়।

৭। প্রভাবের উৎস: শ্রেণী নির্ভর করে অর্থ ও পেশার ওপর। আর জন্ম ও ঐতিহ্যের ওপর  জাতি বা বর্ণ নির্ভর করে ।

 

পরিশেষে বলা যায়, মানুষের আয় ও জীবনযাত্রার মান অনুযায়ী শ্রেণী নির্ধারিত হয়। আর জাতি-বর্ণ নির্ধারিত হয় জন্মগত বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে। শ্রেণী পরিবর্তন করা সম্ভব, কিন্তু জাতি-বর্ণ পরিবর্তন করা যায় না। সমাজে এই দুটি বিষয় মানুষের মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধার ওপর প্রভাব ফেলে। শ্রেণী ও জাতি-বর্ণের কারণে বৈষম্য তৈরি হয় যা সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা ও সমতা রক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

Links

Home

Exams

Live Exam

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD