প্রবেশন এবং প্যারোল কি?

প্রবেশন এবং প্যারোল কি?

প্রবেশন এবং প্যারোল হল দুটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি ব্যবস্থা, যা অপরাধী বিচার ব্যবস্থায় পুনর্বাসন ও সংশোধনের প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। এই দুই ব্যবস্থা অপরাধীদের শাস্তির একটি বিকল্প পন্থা হিসেবে গণ্য হয়, যেখানে তাদের সম্পূর্ণ শাস্তির পরিবর্তে নিয়ন্ত্রিতভাবে সমাজে পুনরায় প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়। যদিও প্রবেশন এবং প্যারোলের মধ্যে বেশ কিছু মিল রয়েছে, তবু এদের মধ্যে পার্থক্যও রয়েছে। নিচে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

প্রবেশন (Probation):
প্রবেশন হল এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে আদালত কোনো অপরাধীর শাস্তি স্থগিত রেখে তাকে নির্দিষ্ট শর্তের অধীনে সমাজে পুনর্বাসনের সুযোগ দেয়। প্রবেশন সাধারণত তখন দেওয়া হয়, যখন অপরাধটি তুলনামূলকভাবে ছোট হয় বা অপরাধীর সংশোধনের সম্ভাবনা থাকে। অপরাধীকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আইনি নিয়মাবলী মেনে চলার শর্তে মুক্তি দেওয়া হয়, তবে যদি তিনি শর্ত লঙ্ঘন করেন, আদালত তাকে পুনরায় কারাগারে পাঠানোর অধিকার রাখে।

আরো পড়ুনঃ কৃষি কাঠামো বলতে কী বুঝায়?

প্রবেশনের বৈশিষ্ট্য:
আদালতের নির্দেশনায়: প্রবেশন সরাসরি আদালতের অধীনে পরিচালিত হয়। আদালত অপরাধীর জন্য শর্ত নির্ধারণ করে দেয়।

প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে: প্রবেশন পিরিয়ডে অপরাধীকে একজন প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়, যিনি তার কার্যক্রম এবং আচরণ পর্যবেক্ষণ করেন। প্রবেশন অফিসারের কাজ হলো নিশ্চিত করা যে অপরাধী আদালতের শর্তগুলো মান্য করছে।

নিয়মিত রিপোর্ট: অপরাধীকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর আদালতে বা প্রবেশন অফিসারের কাছে তার অগ্রগতি রিপোর্ট করতে হয়।

শর্ত ভঙ্গের শাস্তি: প্রবেশন পিরিয়ডে যদি অপরাধী শর্ত ভঙ্গ করেন, তাহলে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হতে পারে এবং পূর্বের স্থগিত শাস্তি পুনরায় কার্যকর হতে পারে।

প্রবেশন কাল: প্রবেশনের সময়সীমা সাধারণত নির্ধারিত হয়, যেমন ৬ মাস, ১ বছর বা ৫ বছর। শর্তগুলো মান্য করলে সময়সীমার শেষে অপরাধীকে পূর্ণ মুক্তি দেওয়া হয়।

প্রবেশনের উদ্দেশ্য:
প্রবেশন মূলত অপরাধীদের পুনর্বাসনে সাহায্য করতে এবং তাদের পুনরায় সমাজে যুক্ত করতে একটি বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে। এর মাধ্যমে অপরাধীরা যাতে কারাগারে সময় কাটানোর পরিবর্তে সমাজে থেকে নিজেদের সংশোধন করতে পারে, সেই সুযোগ দেওয়া হয়।

প্যারোল (Parole):
প্যারোল হল একটি ব্যবস্থার মাধ্যমে একজন বন্দীকে নির্দিষ্ট শর্তের ভিত্তিতে নির্ধারিত শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। তবে এটি শর্তাধীন মুক্তি, যেখানে বন্দীকে আইনের শর্তগুলো মেনে চলতে হয় এবং নিয়মিত প্যারোল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়।

প্যারোলের বৈশিষ্ট্য:
শর্তাধীন মুক্তি: প্যারোল বন্দীকে নির্দিষ্ট শর্তের ভিত্তিতে দেয়া হয়। বন্দীকে আইনের শর্তগুলো মেনে চলতে হয় এবং প্যারোল অফিসারের তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়।


প্যারোল বোর্ডের অনুমতি: প্যারোলের সিদ্ধান্ত সাধারণত প্যারোল বোর্ড গ্রহণ করে। বোর্ড বন্দীর আচরণ, সংশোধনের সম্ভাবনা, এবং সামাজিক পুনর্বাসনের প্রস্তুতি ইত্যাদি বিচার করে তাকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

আরো পড়ুনঃ সমাজকর্ম পরিচিতি বিগত সালের কোশ্চেন 

আচরণ পর্যবেক্ষণ: প্যারোল পিরিয়ডে বন্দীর আচরণ প্যারোল অফিসারের দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হয়। কোনো শর্ত লঙ্ঘন করলে, প্যারোল বাতিল করা হতে পারে এবং বন্দীকে পুনরায় কারাগারে পাঠানো হতে পারে।

প্যারোলের সময়সীমা: প্যারোল সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দেওয়া হয়, যা বন্দীর মূল শাস্তির সময়সীমার মধ্যেই থাকে।

প্যারোল শর্ত লঙ্ঘনের শাস্তি: প্যারোলের শর্ত লঙ্ঘন করলে, প্যারোল বোর্ড বন্দীকে পুনরায় কারাগারে পাঠাতে পারে এবং আগের মেয়াদ সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে থাকতে হতে পারে।

প্যারোলের উদ্দেশ্য:
প্যারোল বন্দীদের পুনর্বাসন ও পুনরায় সমাজে যুক্ত করার একটি প্রক্রিয়া। বন্দীদের শাস্তির মেয়াদ কমিয়ে তাদের উন্নতির সম্ভাবনা বিচার করে, নির্দিষ্ট শর্তে মুক্তি দেওয়া হয় যাতে তারা সমাজে ফিরে এসে একটি নতুন জীবন শুরু করতে পারে। এর মাধ্যমে বন্দী শাস্তি ভোগের পাশাপাশি সমাজে পুনর্বাসনের সুযোগ পায়।

প্রবেশন এবং প্যারোলের মধ্যে পার্থক্য:
১. সময়ের ভিন্নতা: প্রবেশন সাধারণত কারাগারে না গিয়ে সরাসরি আদালতের নির্দেশে দেয়া হয়, যেখানে প্যারোল তখনই দেওয়া হয় যখন একজন বন্দী তার কারাবাসের একটি নির্দিষ্ট অংশ ভোগ করেছে।

২. কারাগার: প্রবেশন মূলত কারাগার এড়ানোর একটি বিকল্প ব্যবস্থা, আর প্যারোল তখনই কার্যকর হয় যখন বন্দী কারাগারে কিছু সময় কাটিয়েছে এবং মুক্তির শর্ত মেনে চলছে।

৩. নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ: প্রবেশন আদালতের অধীনে পরিচালিত হয়, কিন্তু প্যারোল প্যারোল বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

৪. শর্ত লঙ্ঘন: প্রবেশন শর্ত লঙ্ঘন করলে সরাসরি কারাগারে যেতে হয়, আর প্যারোল শর্ত লঙ্ঘন করলে কারাবাস পুনরায় শুরু হয়।

আরো পড়ুনঃ সংবিধানের সংজ্ঞা দাও

উপসংহার: প্রবেশন এবং প্যারোল উভয়ই অপরাধীদের সংশোধন ও পুনর্বাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা। প্রবেশন অপরাধীদের কারাবাসের পরিবর্তে সমাজে থাকার সুযোগ দেয়, আর প্যারোল বন্দীদের কারাবাসের শাস্তির মেয়াদ কমিয়ে সমাজে ফিরে আসার সুযোগ প্রদান করে। উভয় ব্যবস্থার মাধ্যমে অপরাধীরা শাস্তি ভোগের পাশাপাশি সংশোধিত হয়ে সমাজে অবদান রাখতে পারে। তবে শর্ত লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে, যা অপরাধীদের শর্ত মেনে চলার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক ভূমিকা পালন করে।

Shihabur Rahaman
Shihabur Rahaman

Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

Articles: 252