বাংলাদেশের পল্লী উন্নয়নে সরকারি সংস্থার সমূহের ভূমিকা আলোচনা

Shihabur Rahman
বাংলাদেশের
পল্লী উন্নয়নে সরকারি সংস্থার সমূহের ভূমিকা আলোচনা
ভূমিকা:
বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ। এদেশের
অধিকাংশ মানুষ গ্রামীণ এলাকায় বসবাস করে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ৭৬.৬৯% মানুষ
গ্রামে বসবাস করে। তাই দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য পল্লী উন্নয়ন অপরিহার্য। সরকার
বিভিন্ন সংস্থা ও প্রকল্পের মাধ্যমে পল্লী উন্নয়নের কাজ করছে। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য,
অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে সরকারি সংস্থাগুলো গ্রামীণ জনগণের
জীবনমান উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
পল্লী
উন্নয়নের সরকারি সংস্থা সমূহের ভূমিকা: সম্প্রতি সময়ে বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি সরকারি সংস্থাসমূহ
পল্লী উন্নয়নে নানা ধরনের যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। নিম্নে এ বিষয়ে আলোকপাত
করা হলো;
১.
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ (আরডিসি): পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ দেশের গ্রামীণ উন্নয়নের মূল নিয়ন্ত্রক
সংস্থা। এটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে। সমবায় ব্যবস্থার মাধ্যমে
দারিদ্র্য বিমোচন, কৃষি উন্নয়ন, ক্ষুদ্র শিল্প গঠন ও অবকাঠামো উন্নয়নে এ সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে।
২.
বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি): বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড গ্রামাঞ্চলে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ,
সমবায় সমিতি গঠন এবং কৃষি ও অ-কৃষি খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে। এটি দরিদ্র
জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী করতে প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।
৩.
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি): এলজিইডি দেশের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রাখে। এটি গ্রামের রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে যোগাযোগ
ব্যবস্থা উন্নত করে। ফলে কৃষি ও বাণিজ্য সহজতর হয় এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।
৪.
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি): বিএডিসি কৃষকদের উন্নত বীজ, সার ও সেচ সুবিধা সরবরাহ করে। এটি
কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের সহায়তা প্রদান করে। এছাড়া, এটি
সেচ ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে চাষাবাদের পরিধি বৃদ্ধি করে।
৫.
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি): গ্রামের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার জন্য এই সংস্থা
কাজ করছে। বিদ্যুৎ সুবিধা বৃদ্ধির ফলে কৃষি, ক্ষুদ্রশিল্প ও শিক্ষা খাতে উন্নয়ন ঘটছে।
এতে গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে।
৬.
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই):
এই সংস্থা কৃষকদের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান করে। উন্নত বীজ,
জৈব সার, সেচ প্রযুক্তি ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে এটি কৃষকদের সহায়তা করছে। ফলে কৃষি
উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৭.
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক): গ্রামাঞ্চলে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প গড়ে তোলার জন্য বিসিক কাজ
করে। এটি গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ, ঋণ সহায়তা ও প্রযুক্তিগত পরামর্শ প্রদান
করে। ফলে গ্রামের মানুষ স্বাবলম্বী হচ্ছে।
৮.
সমাজসেবা অধিদপ্তর: সমাজসেবা অধিদপ্তর
গ্রামীণ দরিদ্র, বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্য ভাতা ও সহায়তা প্রদান
করে। এটি পল্লী উন্নয়নের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি পরিচালনা করে।
৯.
পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিডব্লিউডিবি): পানি
উন্নয়ন বোর্ড সেচ ব্যবস্থার উন্নতি, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নদীভাঙন প্রতিরোধে কাজ করে।
এটি কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং গ্রামের মানুষের জীবনমান উন্নত করে।
১০.
বাংলাদেশ পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ): পিকেএসএফ বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করে, যা গ্রামীণ
দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করে। এটি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের
আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।
১১.
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়: এই মন্ত্রণালয় বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা ও অন্যান্য দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত
গ্রামীণ জনগণের জন্য ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচি পরিচালনা করে। পাশাপাশি এটি দুর্যোগ
মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণে কাজ করে।
১২.
মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর: গ্রামীণ
নারীদের দক্ষতা উন্নয়ন ও আত্মকর্মসংস্থানের জন্য এই সংস্থা প্রশিক্ষণ ও ঋণ সহায়তা
প্রদান করে। এটি শিশুদের পুষ্টি ও স্বাস্থ্য উন্নয়নে কাজ করে।
১৩.
জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি: এই
কর্মসূচির মাধ্যমে গ্রামীণ দরিদ্র জনগণের জন্য বিভিন্ন ভাতা, খাদ্য সহায়তা ও কর্মসংস্থান
সুবিধা প্রদান করা হয়। এটি দারিদ্র্য বিমোচন ও জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করে।
১৪.
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর: গ্রামের
মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকার কমিউনিটি ক্লিনিক ও হাসপাতাল স্থাপন
করেছে। এই সংস্থা টিকা, মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি
পরিচালনা করে।
১৫.
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর: এটি
গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালনের জন্য প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। প্রাণিসম্পদ
অধিদপ্তরের সহায়তার ফলে গ্রামীণ জনগণের জন্য গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালনে নিরাপদ পরিবেশ
তৈরি হচ্ছে।
১৬.
বন অধিদপ্তর: বন সংরক্ষণ, সামাজিক বনায়ন ও পরিবেশ
সুরক্ষায় এই সংস্থা কাজ করে। এটি গ্রামীণ জনগণকে বনজ সম্পদ ব্যবহারে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা
প্রদান করে।
উপসংহার: বাংলাদেশের পল্লী উন্নয়নে সরকারি সংস্থাগুলোর ভূমিকা অপরিসীম।
কৃষি, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানি ব্যবস্থাপনা, কর্মসংস্থান ও সামাজিক
নিরাপত্তার মাধ্যমে এসব সংস্থা গ্রামীণ জনগণের জীবনমান উন্নত করছে। যদি এসব সংস্থা
কার্যকরভাবে কাজ করে এবং দুর্নীতি মুক্ত হয়, তাহলে বাংলাদেশের পল্লী উন্নয়ন আরও বেগবান
হবে এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
3