বাংলাদেশের পল্লী উন্নয়নে এনজিওর ভূমিকা আলোচনা কর।

Shihabur Rahman
বাংলাদেশের পল্লী উন্নয়নে এনজিওর ভূমিকা আলোচনা কর।
ভূমিকা: বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সামাজিক কাঠামো প্রধানত কৃষিনির্ভর এবং
দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী পল্লী অঞ্চলে বসবাস করে। তাই পল্লী উন্নয়ন দেশের সামগ্রিক অগ্রগতির
জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারিভাবে বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হলেও, বেসরকারি
সংস্থা বা এনজিওগুলো (NGO - Non-Governmental Organization) পল্লী উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করছে।
বাংলাদেশে ব্র্যাক, গ্রামীণ ব্যাংক, আশা, কারিতাস, বন্ধু, ডর্প,
উদ্দীপন, সেবা, মুসলিম এইডসহ অসংখ্য এনজিও কাজ করছে। এরা দারিদ্র্য বিমোচন, ক্ষুদ্রঋণ,
শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি উন্নয়ন, নারী ক্ষমতায়ন, সচেতনতা বৃদ্ধি ও পরিবেশ সংরক্ষণে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি এনজিওগুলোর কার্যক্রম পল্লী উন্নয়নে
শক্তিশালী অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের
পল্লী উন্নয়নে এনজিওর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা: একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা
সমূহ নানাভাবে অবদান রাখে। নিম্নে বাংলাদেশের পল্লী উন্নয়নে এনজিওর গুরুত্ব উপস্থাপন
করা হলো;
১.
দারিদ্র্য বিমোচন ও আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি: বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চলে দারিদ্র্য একটি প্রধান সমস্যা। এনজিওগুলো
ক্ষুদ্রঋণ, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে
আত্মনির্ভরশীল করার উদ্যোগ গ্রহণ করছে। বিশেষ করে ব্র্যাক, গ্রামীণ ব্যাংক, আশা, মুসলিম
এইড ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে হাজারো দরিদ্র পরিবারকে স্বাবলম্বী করেছে।
২.
ক্ষুদ্রঋণ প্রদান ও গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ: ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি এনজিওগুলোর অন্যতম সফল উদ্যোগ। গ্রামীণ ব্যাংক
ও ব্র্যাকের মতো সংস্থাগুলো স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষক ও নারী
উদ্যোক্তাদের সহায়তা করছে। ফলে গরিব মানুষ ব্যবসা শুরু করতে পারছে, কর্মসংস্থান তৈরি
হচ্ছে, এবং পরিবারে আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৩.
কৃষি উন্নয়ন ও কৃষকদের সহায়তা: বাংলাদেশের
অর্থনীতি প্রধানত কৃষিনির্ভর, তাই এনজিওগুলো কৃষি উন্নয়নে প্রশিক্ষণ, নতুন প্রযুক্তির
ব্যবহার, উন্নত বীজ ও সার সরবরাহ, সেচ ব্যবস্থাপনা, এবং কৃষকদের অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান
করছে। ব্র্যাক ও কারিতাসের মতো সংস্থাগুলো গ্রামীণ কৃষকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রতিনিয়ত
কাজ করছে।
৪.
স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টি উন্নয়ন: পল্লী
অঞ্চলে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা সীমিত, তাই এনজিওগুলো স্বাস্থ্য খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রাখছে। ব্র্যাক, আশা ও গ্রামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্র সাশ্রয়ী মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, পরিবার
পরিকল্পনা, গর্ভবতী মায়েদের যত্ন, শিশু টিকাদান ও পুষ্টি সচেতনতাসহ নানা ধরনের জনকল্যাণমুখী
পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সেগুলো পল্লী অঞ্চলে কার্যকর করছে।
৫.
নারী ক্ষমতায়ন ও আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধি: পল্লী অঞ্চলের নারীরা দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিতও বঞ্চনার শিকার হয়ে
আসছে। এনজিওগুলো নারীদের দক্ষতা উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান, স্বনির্ভর
গোষ্ঠী গঠন, ক্ষুদ্রঋণ ও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করার
মাধ্যমে কর্মক্ষম করে তুলছে। ফলে নারীরা স্বাবলম্বী হচ্ছে, ব্যবসা বাণিজ্য নিজেদেরকে
সম্পৃক্ত করার সুযোগ পাচ্ছে এবং সমাজের নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা রাখছে।
৬.
শিক্ষা বিস্তার ও গণসচেতনতা বৃদ্ধি: অনেক
এনজিও অধিকাংশ দরিদ্র অঞ্চলে বিনামূল্যে স্কুল পরিচালনা করছে। ব্র্যাক, উজ্জীবন ও বিদ্যানন্দ
এনজিওগুলো অনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে নারী ও শিশুদের
শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করছে এতে গ্রামীণ এলাকার ছেলেমেয়েরা শিক্ষার আলোয় আলোকিত হচ্ছে।
৭.
নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নয়ন: অনেক গ্রামে এখনো নিরাপদ পানির অভাব এবং সঠিক স্যানিটেশন ব্যবস্থা
গড়ে ওঠেনি। এনজিওগুলো গভীরনলকূপ স্থাপন, পানি বিশুদ্ধকরণ প্রযুক্তি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন
ব্যবস্থা উন্নতকরণ ও জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন করার উদ্যোগ নিয়েছে। এটা
গ্রামের মানুষের মাঝে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৮.
পরিবেশ সংরক্ষণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা: বাংলাদেশ জলবায়ু বিবেচনায় এটি একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ
দেশ। এদেশে সব সময় নানা ধরনের দুর্যোগ কমবেশি লেগেই থাকে। এনজিওগুলো বন সংরক্ষণ, বনায়ন,
দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি, এবং দুর্যোগ পরবর্তী পুনর্বাসন প্রকল্প
পরিচালনা করছে।
৯.
শ্রমজীবী ও কৃষি শ্রমিকদের উন্নয়ন: বহু
এনজিও পল্লী অঞ্চলে শ্রমজীবীদের মজুরি বৃদ্ধির প্রচার, শ্রম অধিকারের বিষয়ে সচেতনতা
তৈরি এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। তাদের এ সকল কার্যক্রমের
ফলে শ্রমিকদের মাঝে অধিকার সচেতনা বিদ্ধি পাচ্ছে।
১০.
গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন: কিছু
এনজিও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনেরঅবকাঠামো যেমন ,সেতু, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি
নির্মাণ, সেচ প্রকল্প ইত্যাদি কাজ করছে। এটি সরাসরি মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে
সাহায্য করছে।
১১.
তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার: এনজিওগুলো
গ্রামের মানুষের জন্য ডিজিটাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম, মোবাইল ব্যাংকিং
ও ডিজিটাল উদ্যোক্তা তৈরিতে ব্যাপক ভূমিকা ভূমিকা পালন করছে। এ সকল উদ্যোগের ফলে পল্লী
এলাকার মানুষজন স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
১২.
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও নারী সুরক্ষা: বাল্যবিবাহ
এখনো গ্রামে বড় সমস্যা। এনজিওগুলো কিশোরীদের সচেতনতা বৃদ্ধি, আইনগত সহায়তা এবং পরিবারকে
উদ্বুদ্ধ করে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করছে।
১৩.
গ্রামীণ যুবকদের দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান: অনেক এনজিও যুবকদের কারিগরি প্রশিক্ষণ, তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণ
ও উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। ফলে তারা হতাশাগ্রস্থ বেকার যুবকরা স্বাবলম্বী
হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
১৪.
মাইক্রোফিন্যান্স ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি: অনেক এনজিও দরিদ্র জনগণের জন্য সঞ্চয় কর্মসূচি ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগ
সুবিধা প্রদান করছে। এটি দারিদ্র্য হ্রাসে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।
১৫.
সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কার্যক্রম: এনজিওগুলো
গ্রামে সাংস্কৃতিক উৎসব, খেলাধুলার প্রতিযোগিতা এবং সামাজিক ঐক্য বৃদ্ধির কার্যক্রম
পরিচালনা করে। এসকল কার্যক্রম পল্লী এলাকার ছেলেমেয়েদের সুস্থ মানসিকতা বিকাশের ক্ষেত্রে
খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১৬.
মানবাধিকার ও আইনগত সহায়তা: পল্লী
অঞ্চলের মানুষদের অনেক সময় আইনগত সহায়তা প্রয়োজন হয়। কিছুকিছু এনজিও বিনা মূল্যে স্বল্পমূল্যে
আইনি সহায়তা প্রদান করছে, যাতে মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে।
উপসংহার:
বাংলাদেশের পল্লী উন্নয়নে বেসরকারি
সংস্থা সমূহের অবদান অনস্বীকার্য। দারিদ্র্য বিমোচন, নারী উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা,
কৃষি উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, মানবাধিকার সুরক্ষা এবং গ্রামীণ অবকাঠামো
নির্মাণে এনজিওগুলো অনন্য ভূমিকা পালন করছে। তবে কিছু এনজিওর অনিয়ম ও অতিরিক্ত মুনাফার
প্রবণতা নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। সঠিক তদারকি ও সুশাসনের মাধ্যমে এনজিওগুলো কার্যক্রম
আরও কার্যকর করা গেলে বাংলাদেশের পল্লী উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে এবং টেকসই উন্নয়নের
লক্ষ্য অর্জিত হবে।
3
সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণী বলতে কি বুঝ?

Shihabur Rahman
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কি?

Shihabur Rahman
মরণশীলতা ও প্রজননশীলতা বলতে কি বুঝ?

Shihabur Rahman
উপনিবেশবাদ কি?

Shihabur Rahman
গ্রামীণ সমাজের / সম্প্রদায়ের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট ব্যাখ্যা কর।
