নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ আলোচনা কর।

Avatar

Shihabur Rahman

Academic

নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ আলোচনা কর। 

ভূমিকা: “বিশ্বে যা—কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।” কাজী নজরুল ইসলামের চিরন্তন বাণীর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বলা যায় একটি দেশের অগ্রগতিতে নারীর ক্ষমতায়ন কতটা জরুরী। বাংলাদেশ সরকার নারীর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এই উদ্যোগগুলো নারীদের সম্মান, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, আইনি সহায়তা, নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা নিশ্চিত করতে তাদের সহায়ক হয়েছে। নিচে নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপসমূহ আলোচনা করা হলো।

 

১. নারী শিক্ষা প্রসার: বাংলাদেশ সরকার নারী শিক্ষার উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। সরকার কর্তৃক মেয়েদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা, উপবৃত্তি প্রদান এবং স্কুলে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নারী শিক্ষার হার বাড়ানোর জন্য মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত মেয়েদের বিনামূল্যে বই ও মাসিক বেতন মওকুফসহ নানা সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়। 

 

২. কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি: নারীদের জন্য কর্মসংস্থান বাড়াতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে নারীদের জন্য কোটা নির্ধারণ, উদ্যোক্তা হিসেবে নারীদের সহায়তা, ক্ষুদ্রঋণ প্রদান এবং দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা হয়েছে।

 

৩. ক্ষুদ্রঋণ ও অর্থনৈতিক সহায়তা: নারীদের স্বাবলম্বী করতে সরকার বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করছে। বিশেষ করে গ্রামীণ নারীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা রয়েছে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য কম সুদে ঋণ ও অনুদান দেওয়া হচ্ছে।

 

৪. সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি: সরকার বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বয়স্ক নারীদের ভাতা এবং দরিদ্র নারীদের জন্য বিভিন্ন ভাতা প্রদান করছে। এই কর্মসূচিগুলো নারীদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করছে।

 

৫. নারীর স্বাস্থ্যসেবা: নারীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকার মাতৃসেবা, প্রসূতি সেবা, টিকাদান কর্মসূচি এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। গ্রাম পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করে নারীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

 

৬. নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন: নারীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সংরক্ষিত আসন ও জাতীয় সংসদে নারী কোটার ব্যবস্থা করেছে। এতে নারীরা নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে ভূমিকা রাখতে পারছে।

 

৭. নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধ: নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে সরকার কঠোর আইন প্রণয়ন করেছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইন, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। 

 

৮. নারী উন্নয়ন নীতি: নারীদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সরকার জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি প্রণয়ন করেছে। এতে নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

 

৯. প্রযুক্তি ও ডিজিটাল সেবা প্রদান: নারীদের ডিজিটাল দক্ষতা বাড়াতে সরকার তথ্য প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ, অনলাইন উদ্যোক্তা কার্যক্রম এবং ডিজিটাল আর্থিক সেবার ব্যবস্থা করেছে। নারীদের জন্য বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ব্যবসা ও কাজের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে।

 

১০. নারীদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ: নারীদের জন্য কর্মস্থলে নিরাপদ ও যৌন হয়রানিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে শ্রম আইন সংস্কার করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নারীদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার ও মাতৃত্বকালীন সুবিধা প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

 

১১. নারীর আইনি সহায়তা: নারীদের আইনি সহায়তা দিতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। জাতীয় মহিলা আইন সহায়তা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, বিনামূল্যে আইনি সহায়তা প্রদান এবং নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে।

 

১২. নারীর ভূমি ও সম্পত্তির অধিকার: সরকার নারীদের ভূমি ও সম্পত্তির অধিকার সুরক্ষার জন্য আইন বাস্তবায়ন করছে। নারীদের উত্তরাধিকার ও মালিকানা নিশ্চিত করতে সরকারি প্রচারণা ও আইনি সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

 

১৩. নারীদের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বিকাশ: সরকার নারীদের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। নারী ক্রীড়াবিদদের জন্য প্রশিক্ষণ ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

 

১৪. গ্রামীণ নারীদের ক্ষমতায়ন: গ্রামীণ নারীদের উন্নয়নের জন্য বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তাদের জন্য কৃষি, হাঁস-মুরগি পালন ও ক্ষুদ্র ব্যবসার প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এতে গ্রামীণ নারীরা স্বাবলম্বী হচ্ছে।

 

১৫. নারী বান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা: নারীদের জন্য নিরাপদ ও আলাদা পরিবহন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। শহর এলাকায় স্বল্প পরিসরে নারী বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে, যাতে নারীরা নিরাপদে যাতায়াত করতে পারে। পরবর্তীতে দেশের সর্বত্র নারীবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

 

১৬. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব: নারীর ক্ষমতায়নের জন্য সরকার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে কাজ করছে। জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য সংস্থার সহযোগিতায় নারীদের জন্য উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।

 

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ সরকার বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, আইনি সহায়তা, নিরাপত্তা এবং সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে। এই উদ্যোগগুলোর ফলে নারীরা সমাজের বিভিন্ন স্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ভবিষ্যতে এই কর্মসূচিগুলো আরও বিস্তৃত হলে নারীরা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং জাতীয় উন্নয়নে বড় অবদান রাখবে।

 

Links

Home

Exams

Live Exam

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD