মার্কিন সিনেট পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী দ্বিতীয় কক্ষ।

Shihabur Rahman
"মার্কিন সিনেট পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী দ্বিতীয় কক্ষ।" ব্যাখ্যা কর।
ভূমিকা:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস দ্বিকক্ষবিশিষ্ট
আইনসভা, যার উচ্চকক্ষ সিনেট (Senate) এবং নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ (House of
Representatives)। সিনেটকে বিশ্বের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী দ্বিতীয় কক্ষ হিসেবে বিবেচনা
করা হয়, কারণ এটি আইন প্রণয়ন, নির্বাহী ও বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণ, সংবিধান সংশোধন, এবং
জাতীয় জরুরি পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সিনেটররা ৬ বছরের জন্য নির্বাচিত
হন। সিনেট রাষ্ট্রপতির মনোনীত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অনুমোদন বা প্রত্যাখ্যান করতে
পারে, যা নির্বাহী বিভাগের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে। তাই এটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায়
এক অনন্য শক্তিশালী উচ্চকক্ষ।
মার্কিন
সিনেটের শক্তিশালী হওয়ার কারণসমূহ: মার্কিন
সিনেট শক্তিশালী হওয়ার পিছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যথা নিম্নরূপ;
১.
সমপ্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে গঠন: সিনেটে
প্রতিটি অঙ্গরাজ্য সমানভাবে প্রতিনিধিত্ব পায়, যা ছোট এবং বড় রাজ্যগুলোর মধ্যে ক্ষমতার
ভারসাম্য বজায় রাখে। মোট ৫০ টি অঙ্গরাজ্যে সিনেটরের সংখ্যা ১০০জন। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে
দুইজন করে সিনেটর থাকেন। ফলে জনসংখ্যার ভিত্তিতে নয় বরং অঙ্গরাজ্যের ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্ব
নিশ্চিত করা হয়, যা ফেডারেল ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে।
২.
দীর্ঘ মেয়াদ ও স্থায়িত্ব: সিনেটরদের
মেয়াদ ৬ বছর, যা প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যদের ২ বছরের তুলনায় তিনগুণ বেশি। প্রতি দুই
বছর অন্তর অন্তর সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ সদস্য নির্বাচন করা হয়, ফলে এটি স্থায়িত্ব
বজায় রাখে এবং নীতিগত ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করে।
৩.
আইন প্রণয়ন ক্ষমতা: মার্কিন
কংগ্রেসের উভয় কক্ষ আইন প্রণয়ন করতে পারে, তবে সিনেটের অনুমোদন ছাড়া কোনো বিল আইন
হিসেবে কার্যকর হয় না। ফলে সিনেট সরাসরি আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রাখে।
৪.
আন্তর্জাতিক চুক্তি ও সন্ধি অনুমোদন: মার্কিন
রাষ্ট্রপতি কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি বা সন্ধি স্বাক্ষর করলেও, তা কার্যকর করতে সিনেটের
দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের অনুমোদন প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, ১৯১৯ সালে রাষ্ট্রপতি উড্রো
উইলসনের স্বাক্ষরিত ভার্সাই চুক্তি সিনেট অনুমোদন না দেওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
জাতিপুঞ্জে যোগ দিতে পারেনি।
৫.
উচ্চপদস্থ নিয়োগ অনুমোদন: রাষ্ট্রপতি
উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যেমন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, রাষ্ট্রদূত,
এবং ফেডারেল সংস্থার প্রধানদের মনোনয়ন দেন, তবে সিনেট তাদের অনুমোদন বা বাতিল করার
ক্ষমতা রাখে। এটি নির্বাহী বিভাগের উপর সিনেটের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।
৬.
ইম্পিচমেন্ট বিচার: প্রতিনিধি পরিষদ
রাষ্ট্রপতি বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ইম্পিচমেন্ট অভিযোগ দাখিল করে সিনেট সেই
অভিযোগের বিচার করে। যদি সিনেটের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য দোষী সাব্যস্ত করে, তবে অভিযুক্ত
ব্যক্তিকে পদ থেকে অপসারণ করা হয়। যেমন; "রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটন এবং ডোনাল্ড
ট্রাম্পের অভিশংসন বিচার (ইম্পিচমেন্ট ট্রায়াল) সিনেটে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।"
৭.
পররাষ্ট্রনীতিতে প্রভাব: সিনেটের
বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটি রাষ্ট্রপতির পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করে। রাষ্ট্রপতি সাধারণত এই কমিটির সাথে পরামর্শ করে আন্তর্জাতিক নীতি ও কৌশল
নির্ধারণ করেন।
৮.
তদন্ত করার ক্ষমতা: সিনেট বিভিন্ন
কমিটির মাধ্যমে সরকারি কার্যক্রম, নীতি, এবং কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনা
করতে পারে। ১৯৭০-এর দশকের ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির তদন্তে সিনেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করেছিল।
৯.
সংবিধান সংশোধন ক্ষমতা: সংবিধান
সংশোধনের জন্য কংগ্রেসের উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন। যেকোনো
সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সিনেট বড় ভূমিকা পালন করে।
১০.
নির্বাচন সংক্রান্ত ক্ষমতা: উপ-রাষ্ট্রপতি
নির্বাচনে যদি প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পান, তাহলে সিনেট সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত তিনজন
প্রার্থীর মধ্যে থেকে একজনকে উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচন করে।
১১.
নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি: মার্কিন
সংবিধান নির্বাহী ও আইন পরিষদের ভারসাম্য নিশ্চিত করতে সিনেটকে অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রদান
করেছে। এই অতিরিক্ত ক্ষমতার কারণে রাষ্ট্রপতি বা প্রতিনিধি পরিষদ স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার
সুযোগ পায় না।
১২.
দীর্ঘমেয়াদী নীতি নির্ধারণ: সিনেটরদের
৬ বছরের মেয়াদ তাদের স্বল্পমেয়াদী রাজনৈতিক চাপ থেকে মুক্ত রাখে এবং দীর্ঘমেয়াদী
নীতি বাস্তবায়নে মনোযোগী হতে সাহায্য করে। এটি অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন,
স্বাস্থ্যনীতি ও শিক্ষা সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৮ সালের
অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের পরিকল্পনা সিনেটের দীর্ঘমেয়াদী নীতির সুফল ছিল।
১৩.
অভিজ্ঞতা ও বিশেষজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ: দীর্ঘ
মেয়াদের কারণে সিনেটররা আইন প্রণয়ন, প্রতিরক্ষা, বাজেট পরিকল্পনা, ও পররাষ্ট্রনীতি
সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ হতে পারেন। বিভিন্ন কমিটিতে কাজ করার ফলে তারা অভিজ্ঞতা অর্জন করেন,
যা ভবিষ্যতে দক্ষ নীতি প্রণয়নে সহায়তা করে।
১৪.
জনমতের প্রতিফলন ও রাজ্য স্বার্থ সংরক্ষণ: সিনেটের সমপ্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা ছোট-বড় রাজ্যের মধ্যে ভারসাম্য
বজায় রাখে এবং অঙ্গরাজ্যের স্বার্থ রক্ষা করে। সিনেটররা স্থানীয় কৃষি, শিল্প, পরিবেশগত
সমস্যা, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষানীতি নিয়ে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কথা বলেন। উদাহরণস্বরূপ,
কৃষিপ্রধান রাজ্যগুলোর সিনেটররা কৃষি নীতিতে বিশেষ গুরুত্ব দেন, যা স্থানীয় অর্থনীতি
সংরক্ষণে সহায়তা করে।
১৫.
দ্বিদলীয় সহযোগিতা বৃদ্ধি: মার্কিন
সিনেটে বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ আইন পাস করতে ৬০ ভোটের প্রয়োজন, যা সাধারণত দুই দলের
সমর্থন ছাড়া সম্ভব নয়। ফলে সিনেট দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে সমঝোতামূলক আইন প্রণয়নকে
উৎসাহিত করে।
১৬.
জরুরি অবস্থায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা: জাতীয় সংকট বা জরুরি অবস্থায় সিনেট দ্রুত আইন পাস করতে পারে,
যা প্রতিরক্ষা, অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, ৯/১১
হামলার পর সিনেট দ্রুত প্যাট্রিয়ট অ্যাক্ট পাস করার মাধ্যমে মার্কিন নিরাপত্তা ব্যবস্থা
শক্তিশালী করে। এছাড়া, ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির সময়, সিনেট দ্রুত অর্থনৈতিক সহায়তা
বিল অনুমোদন করে।
উপসংহার:
মার্কিন সিনেট কেবল একটি আইন প্রণয়নকারী
উচ্চকক্ষ নয়, এটি রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, পররাষ্ট্রনীতি, প্রশাসন,
এবং সংবিধান সংশোধনে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। অন্যান্য দেশের উচ্চকক্ষের তুলনায় মার্কিন
সিনেট অনেক বেশি কার্যকর এবং শক্তিশালী। দীর্ঘমেয়াদী কার্যকারিতা, নীতি প্রণয়নে গভীরতা,
রাষ্ট্রপতির কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা, এবং প্রশাসনের উপর কঠোর নজরদারির সক্ষমতা
এটিকে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী দ্বিতীয় কক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
12
সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণী বলতে কি বুঝ?

Shihabur Rahman
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কি?

Shihabur Rahman
মরণশীলতা ও প্রজননশীলতা বলতে কি বুঝ?

Shihabur Rahman
উপনিবেশবাদ কি?

Shihabur Rahman
গ্রামীণ সমাজের / সম্প্রদায়ের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট ব্যাখ্যা কর।
