লিঙ্গের ভিত্তিতে সামাজিক অসমতা 

লিঙ্গের ভিত্তিতে সামাজিক অসমতা 

ভূমিকা: সামাজিক অসমতা বলতে বোঝায় সমাজের সদস্যদের মধ্যে আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, এবং সাংস্কৃতিক সম্পদের অসম বণ্টন। এটি একটি বড় সামাজিক সমস্যা যা সমাজের উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করে। সমাজের বিভিন্ন স্তরে আর্থিক, সামাজিক, এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং সুযোগের অসম বণ্টন মানবাধিকার লঙ্ঘন করে এবং সমতার পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে। লিঙ্গভিত্তিক সামাজিক অসমতা এই অসমতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা নারীদের পুরুষদের তুলনায় বৈষম্যের শিকার করে তোলে।

লিঙ্গের ভিত্তিতে সামাজিক অসমতা: লিঙ্গের ভিত্তিতে সামাজিক অসমতা এমন এক সামাজিক অবস্থা যেখানে পুরুষ এবং নারী সমান সুযোগ, অধিকার, এবং মর্যাদা পায় না। এই বৈষম্য সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়, যেমন শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়। নারীরা পুরুষদের তুলনায় কম সুযোগ পায় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শোষণের শিকার হয়। এই বৈষম্যের কারণ সাংস্কৃতিক প্রথা, সামাজিক মানসিকতা এবং অর্থনৈতিক অসমতা।

লিঙ্গভিত্তিক সামাজিক অসমতার বিভিন্ন দিক:

১. শিক্ষা: নারীরা ছেলেদের তুলনায় অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। শিক্ষার ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য এখনো অনেক সমাজে বিদ্যমান। অনেক দরিদ্র পরিবারে ছেলেদের পড়াশোনার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, যেখানে মেয়েদের পড়াশোনা করার সুযোগ কম। ফলে মেয়েরা শিক্ষা থেকে পিছিয়ে পড়ে এবং তাদের সমাজে পূর্ণাঙ্গভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে।

২. কর্মসংস্থান: নারীরা কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়। তাদের মজুরি পুরুষদের তুলনায় কম হয় এবং পদোন্নতির সুযোগ কম। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে মহিলারা একই কাজ করলেও পুরুষদের চেয়ে কম বেতন পায়। কাজের স্থায়িত্বের অভাব এবং পরিবার ও সমাজের দায়িত্ব পালনে বাধ্যতামূলক ভূমিকা পালন করায় নারীরা কর্মক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে।

আরো পড়ুনঃ সামাজিক আইন কাকে বলে 

৩. রাজনীতি: নারীরা রাজনীতিতে কম অংশগ্রহণ করে এবং তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা পুরুষদের তুলনায় অনেক কম। জাতীয় সংসদ, স্থানীয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীদের সংখ্যা এবং প্রভাব পুরুষদের তুলনায় অনেক কম। ফলে নারীদের স্বার্থ এবং অধিকার রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে।

৪. স্বাস্থ্যসেবা: নারীরা স্বাস্থ্যসেবা থেকেও বৈষম্যের শিকার হয়। গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদানজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবিলায় নারীরা প্রায়ই যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা পায় না। দরিদ্র দেশগুলোতে নারীরা বিশেষ করে এই বৈষম্যের শিকার হয়, যেখানে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয় না।

৫. সহিংসতা: নারীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি সহিংসতার শিকার হয়। এটি পরিবারে, কর্মক্ষেত্রে এবং সমাজে বিভিন্ন স্থানে হতে পারে। নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানি এবং গার্হস্থ্য সহিংসতার মতো অপরাধ নারীদের ওপর শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক ক্ষতির কারণ হয়।

লিঙ্গভিত্তিক সামাজিক অসমতার কারণ:

১. সাংস্কৃতিক ধারণা: কিছু সংস্কৃতিতে পুরুষদের নারীদের তুলনায় অধিক মূল্য দেওয়া হয়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীরা অনেক সময় পুরুষের অধীনস্থ থাকে। এই প্রথাগত ধারণা নারীদের ক্ষমতাহীন অবস্থানে রাখে এবং লিঙ্গবৈষম্যকে টিকিয়ে রাখে।

আরো পড়ুনঃ  দল সমাজকর্মের উপাদানগুলো কী কী?

২. আইন ও নীতি: অনেক দেশে আইন এবং সামাজিক নীতি নারীদের সমান অধিকার দেয় না। কিছু সমাজে নারীদের সম্পত্তির অধিকার, উত্তরাধিকারের অধিকার এবং অন্যান্য সামাজিক অধিকার পাওয়ার সুযোগ সীমিত।

৩. অর্থনৈতিক অবস্থা: দরিদ্র পরিবারগুলিতে মেয়েদের শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া হয় না। অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল পরিবারগুলোতে ছেলেদের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং মেয়েদের প্রায়শই গৃহস্থালির কাজের মধ্যে আবদ্ধ রাখা হয়।

উপসংহার: লিঙ্গভিত্তিক সামাজিক অসমতা সমাজের একটি গুরুতর সমস্যা, যা নারী ও পুরুষের মধ্যে সমান সুযোগ এবং মর্যাদা প্রদান থেকে বিরত রাখে। নারীদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যসেবা এবং রাজনীতিতে সমান সুযোগ প্রদান করা এবং বৈষম্য দূর করা সমাজের সমতা প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লিঙ্গবৈষম্য দূর করার মাধ্যমে সমাজে নারীদের ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পাবে এবং উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে।

Shihabur Rahaman
Shihabur Rahaman

Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

Articles: 263