লিঙ্গ অসমতা কি?

Shihabur Rahman
লিঙ্গ
অসমতা কি?
ভূমিকা:
লিঙ্গ অসমতা/বৈষম্য একটি সামাজিক সমস্যা
যা নারীদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এবং সমাজের সার্বিক উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা
সৃষ্টি করে। সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই নারী-পুরুষ একসঙ্গে সমাজ বিনির্মাণে অবদান রেখে
আসছে। কিন্তু আজও, নারী-পুরুষের মধ্যে স্পষ্ট অসমতা বিদ্যমান, যা উন্নত ও অনুন্নত সব
সমাজের জন্যই একটি সাধারণ বাস্তবতা। নারী অধিকারকে উপেক্ষা করে উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই
লিঙ্গভিত্তিক অসমতা দূর করার জন্য নারীকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করা অপরিহার্য।
লিঙ্গ
অসমতা/বৈষম্য:
লিঙ্গভিত্তিক অসমতা বলতে বোঝায়, জেন্ডার বা লিঙ্গের ভিত্তিতে সমাজে নারী ও পুরুষের
মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিদ্যমান বৈষম্য। লিঙ্গ
বৈষম্য হলো সমাজে নারী ও পুরুষের প্রতি অসম আচরণ। এটি একটি সামাজিক সমস্যা যা শিক্ষা,
কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, সম্পত্তির অধিকার এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে নারীদের পিছিয়ে
রাখে। লিঙ্গ বৈষম্য কেবল ব্যক্তি পর্যায়ে নয়, পারিবারিক, সামাজিক, এবং রাষ্ট্রীয়
নীতি-নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
উন্নয়নশীল
দেশে জেন্ডার অসমতার প্রকৃতি/ক্ষেত্র: উন্নয়নশীল
দেশে লিঙ্গ বৈষম্যের বিভিন্ন রূপ এবং ক্ষেত্র লক্ষ্য করা যায়, যা নারীদের সমঅধিকারের
পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে। এর প্রধান ক্ষেত্রগুলো নিম্নে উপস্থাপন করা হলো:
১.
শিক্ষা: অনেক উন্নয়নশীল দেশে ছেলেদের তুলনায়
মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার হার অনেক কম। এ সকল দেশের আর্থিক সঙ্কট, সামাজিক নিয়ম বা
বাল্যবিবাহের কারণে মেয়েদের শিক্ষাকে উপেক্ষা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, গ্রামীণ এলাকায়
মেয়েদের স্কুল ছাড়ার হার অনেক বেশি।
২.
কর্মসংস্থান: কর্মক্ষেত্রে নারীরা একই কাজের জন্য
পুরুষদের তুলনায় কম বেতন পায়। এছাড়াও পরিবারসহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের সিদ্ধান্ত
গ্রহণের ক্ষমতা বা নেতৃত্বের ভূমিকায় অংশ গ্রহণ খুবই সীমিত।
৩.
স্বাস্থ্যসেবা: বিশ্বের সকল
অনুন্নত, স্বল্পোন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশে নারীরা তাদের মাতৃস্বাস্থ্য, প্রজনন স্বাস্থ্য,
এবং স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে প্রায়ই উপেক্ষিত হয়। এসকল দেশগুলোতে নারীদের প্রসূতি মৃত্যুর
হার এখনও উদ্বেগজনক।
৪.
রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন: নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ কম, এবং নেতৃত্বের ভূমিকায়
তারা প্রায় অনুপস্থিত। অনেক দেশে সংসদে নারীদের সংখ্যা পুরুষদের তুলনায় অনেক নগণ্য।
৫.
বাল্যবিবাহ ও যৌন সহিংসতা:
বাল্যবিবাহ নারীদের শিক্ষার অধিকার ও স্বাধীনতাকে চরমভাবে ক্ষুণ্ণ করে। যৌন হয়রানি
এবং পারিবারিক সহিংসতা নারীদের মানসিক ও শারীরিক উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে।
৬.
সম্পত্তির অধিকার: অনেক সমাজে বিশেষ
করে হিন্দু সমাজে নারীদের সম্পত্তির অধিকার পুরুষদের তুলনায় কম। এ কারণে তারা আর্থিকভাবে
স্বাবলম্বী হতে পারেন না।
উপসংহার: পরিশেষে একথা স্পষ্ট
যে, উন্নয়নশীল দেশে লিঙ্গ বৈষম্য একটি গুরুতর সামাজিক সমস্যা, যা নারীদের মৌলিক অধিকার
থেকে বঞ্চিত করে। তাই শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য, এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে
নারীদের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। এটি শুধু নারীদের উন্নয়ন নয়, বরং সামগ্রিক
অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
3
4