লিঙ্গ বৈষম্য কি

Avatar

Shihabur Rahman

Academic

লিঙ্গ বৈষম্য কি? 

ভূমিকা: লিঙ্গ বৈষম্য একটি সামাজিক সমস্যা যা পৃথিবীজুড়ে বিদ্যমান। এটি মূলত পুরুষ এবং মহিলা বা অন্য লিঙ্গের মানুষের মধ্যে সমান অধিকার, সুযোগ এবং সুবিধার অসম আচরণকে বোঝায়। লিঙ্গ বৈষম্যের ফলে সমাজের বিভিন্ন স্তরে পুরুষ ও মহিলার মধ্যে কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, রাজনৈতিক ক্ষমতা, এবং সামাজিক মর্যাদার ক্ষেত্রে পার্থক্য সৃষ্টি হয়। এই বৈষম্য শুধুমাত্র নারী-পুরুষ সম্পর্কিত নয়, এটি ট্রান্সজেন্ডার ও অন্যান্য লিঙ্গের উপরও প্রভাব ফেলে। আজকের আধুনিক সমাজে লিঙ্গ বৈষম্য একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, এবং এটি মোকাবেলা করার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষা অপরিহার্য।

 

লিঙ্গ বৈষম্য:  লিঙ্গ বৈষম্য বলতে এমন পরিস্থিতি বা অবস্থাকে বোঝানো হয় যেখানে পুরুষ এবং মহিলার মধ্যে সামাজিক, অর্থনৈতিক, এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পার্থক্য সৃষ্টি হয়। এতে এক লিঙ্গের মানুষকে অপর লিঙ্গের তুলনায় কম সুযোগ - সুবিধা, বা  অধিকার  দেওয়া হয়। এটি সমাজে মানুষের অধিকার ও সুযোগের সমতা নষ্ট করে এক ধরনের বৈষম্য তৈরি করে । লিঙ্গ বৈষম্য কখনও প্রথাগত, কখনও জাতিগত,  আবার কখনো  সামাজিক বা সাংস্কৃতিক অঙ্গীকারের কারণে গড়ে ওঠে।

লিঙ্গ বৈষম্য সম্পর্কে সমাজ বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন  মতামত দিয়েছেন। নিম্নে সেগুলো সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো।

 

  1. সিমোন দ্য বোভোয়ার (Simone de Beauvoir): তিনি তার বিখ্যাত বই "The Second Sex" এ বলেছেন, "মহিলা কখনও জন্ম নেয় না, বরং তাকে তৈরি করা হয়।" এর মাধ্যমে তিনি বুঝিয়েছেন যে, লিঙ্গ বৈষম্য প্রকৃতি থেকে নয়, বরং সমাজে তৈরি হওয়া একটি সমস্যা।
  2. মার্গারেট মীড (Margaret Mead) বলেছেন, "লিঙ্গ বৈষম্য সামাজিক কাঠামোর দ্বারা তৈরি।" তিনি দেখেছেন, বিভিন্ন সমাজে পুরুষ ও মহিলার ভূমিকা আলাদা এবং তা নির্ধারণ করা হয় ঐ সমাজের চাহিদা অনুযায়ী। 
  3. বেল হুকস (Bell Hooks): বেল হুকস তার লেখায় বলেছেন, "লিঙ্গ বৈষম্য সমাজে নারী-পুরুষের ভূমিকা এবং ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা নির্দেশ করে।" তিনি মনে করেন, সমাজে সমান অধিকার পাওয়ার জন্য নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা জরুরি।
  4. জুডিথ বাটলার (Judith Butler) তাঁর বিখ্যাত বই "Gender Trouble" তে বলেছেন, "লিঙ্গের ধারণা সামাজিকভাবে গড়ে ওঠে এবং তার ভিত্তিতে মানুষকে পুরুষ বা নারী হিসেবে সনাক্ত করা হয়।" এখানে  জুডিথ বাটলার দেখিয়েছেন, লিঙ্গ জন্মগত বা নির্দিষ্ট কিছু নয়, বরং এটি সামাজিক কাঠামো ও সংস্কৃতির প্রভাবে গঠিত।
  5. ইভা ফেদের কিট্টে (Eva Feder Kittay): মার্কিন দার্শনিক এবং নারীবাদী তত্ত্ববিদ বলেন, "লিঙ্গ বৈষম্য শুধুমাত্র নারীদের বিরুদ্ধে নয়, এটি সমাজের সকল সদস্যের জন্য ক্ষতিকর।" তিনি লিঙ্গ বৈষম্য ও সমাজের মধ্যে সম্পর্কের উপর গুরুত্ব দেন এবং সমান অধিকারকে একটি মৌলিক মানবিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।

 

পরিশেষে বলা যায়, লিঙ্গ বৈষম্য সব সমাজের জন্য বড় সমস্যা। এটি শুধু নারীদের অধিকার কমিয়ে দিচ্ছে বিষয়টা এমন নয় বরং এর ফলে গোটা জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে হলে সুশিক্ষা, সচেতনতা, এবং যথাযথ আইনি ব্যবস্থা অপরিহার্য। সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য সমাজের সকল স্তরে নারী ও পুরুষের যথাযথ সুযোগ এবং অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে  লিঙ্গ বৈষম্যমুক্ত ও সমতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত একটি সুন্দর সমাজ গড়া সম্ভব।     

Links

Home

Exams

Live Exam

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD