জাতি বর্ণপ্রথা বলতে কি বুঝায়?

Avatar

Shihabur Rahman

Academic

জাতি বর্ণপ্রথা বলতে কি বুঝায়?

ভূমিকা: মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সমাজের মধ্যে বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করে। সমাজবিজ্ঞানে 'জাতি' বলতে সাধারণত এমন একদল মানুষকে বোঝায়, যাদের ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম বা ইতিহাস এক। অন্যদিকে, 'বর্ণপ্রথা' হলো সমাজে জন্মভিত্তিক শ্রেণিবিন্যাস, যেখানে মানুষ উচ্চ ও নিম্ন স্তরে বিভক্ত থাকে। এই প্রথা সমাজের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জাতি ও বর্ণপ্রথা বিদ্যমান।

 

জাতির ধারণা: জাতি বলতে সাধারণত এমন একটি গোষ্ঠীকে বোঝায়, যারা একটি নির্দিষ্ট সংস্কৃতি, ভাষা, ধর্ম বা ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে আবদ্ধ। জাতিগত পরিচয় মানুষের আত্মপরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জাতিগত পরিচয় অনেক সময় সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিভাজন তৈরি করতে পারে। যেমন— দক্ষিণ আফ্রিকায় একসময় বর্ণবাদী শাসনব্যবস্থা চালু ছিল, যেখানে শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে সুস্পষ্ট বিভাজন ছিল।

 

বর্ণপ্রথার অর্থ ও প্রভাব: বর্ণপ্রথা হলো এমন একটি সামাজিক ব্যবস্থা, যেখানে জন্মের ভিত্তিতে মানুষের মর্যাদা নির্ধারিত হয়। ভারতে বহু শতাব্দী ধরে চার বর্ণের প্রথা প্রচলিত ছিল— ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র। ব্রাহ্মণরা ছিলেন পুরোহিত শ্রেণি, ক্ষত্রিয়রা ছিলেন যোদ্ধা, বৈশ্যরা ব্যবসায়ী, আর শূদ্ররা শ্রমজীবী। এই ব্যবস্থা অনেক মানুষকে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে রেখেছে।

 

জাতি ও বর্ণপ্রথার নেতিবাচক দিক: জাতি ও বর্ণভিত্তিক বিভাজন সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করে। জাতিগত সংঘাত ও বৈষম্যের ফলে মানুষ একে অপরের প্রতি হিংস্র হয়ে ওঠে। যেমন— হিটলারের শাসনকালে ইহুদিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা পরিচালিত হয়েছিল। আবার, আমেরিকায় একসময় কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি চরম বৈষম্য করা হতো। জাতি ও বর্ণভিত্তিক বিভাজন সমাজের অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করে।

 

উপসংহার: জাতি ও বর্ণপ্রথার প্রভাব বিশ্বজুড়ে বিভিন্নভাবে দেখা যায়। নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, "কেউ জন্মগতভাবে অন্যের প্রতি ঘৃণা নিয়ে জন্মায় না। মানুষকে ঘৃণা শেখানো হয়, আবার ভালোবাসাও শেখানো যায়।" তাই সমাজে ন্যায়বিচার ও সমতার ভিত্তিতে সবাইকে এগিয়ে যেতে হবে। বর্ণ ও জাতিভেদ ভুলে গিয়ে মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠাই উন্নত সমাজের মূল ভিত্তি।

 

Links

Home

Exams

Live Exam

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD