গ্রামীণ সম্প্রদায় বলতে কি বুঝায়? এর বৈশিষ্ট লেখো।

Shihabur Rahman
গ্রামীণ
সম্প্রদায় বলতে কি বুঝায়? এর বৈশিষ্ট লেখো।
ভূমিকা:
একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের
সমষ্টিকে গ্রামীণ সম্প্রদায় বলা হয়। তারা সাধারণত কৃষি, পশুপালন, মৎস্যচাষ ও কুটিরশিল্পের
ওপর নির্ভরশীল। পারস্পরিক সহায়তা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির গভীর প্রভাব এখানে স্পষ্ট। নগর
জীবনের তুলনায় গ্রামীণ জীবন সহজ, সরল ও প্রকৃতিনির্ভর। প্রযুক্তি ও নগরায়ণের প্রভাব
থাকলেও গ্রামীণ সম্প্রদায়ের মৌলিক বৈশিষ্ট্য এখনো অটুট রয়েছে।
গ্রামীণ
সম্প্রদায়ের বৈশিষ্ট্যসমূহ: গ্রামীণ
সম্প্রদায়ের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে যথা নিম্নরূপ;
১.
ভৌগোলিক অবস্থান: গ্রামীণ সম্প্রদায়
প্রধানত গ্রামাঞ্চলে বসবাস করে, যেখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব কম এবং খোলা প্রাকৃতিক পরিবেশ
বিদ্যমান। গ্রামের মানুষ প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর বেশি নির্ভরশীল। শহরের তুলনায় গ্রামীন
এলাকার পরিবেশ তুলনামূলক শান্তশিষ্ট। এখানে কৃষিকাজের জন্য সহায়ক নদী, মাঠ, খেত-খামার,
বনাঞ্চল, এবং খোলা আকাশ বেশি দেখা যায়।
২.
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড: এই
সম্প্রদায়ের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কৃষি, যা অধিকাংশ মানুষের জীবিকার উৎস। কৃষির
পাশাপাশি পশুপালন, মৎস্যচাষ, হস্তশিল্প, তাঁতশিল্প ও কুটিরশিল্পও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করে। বর্তমানে কিছু গ্রামে ক্ষুদ্র শিল্প ও ব্যবসার প্রসার ঘটছে, তবে বেশিরভাগ
মানুষ কৃষিনির্ভর রয়ে গেছে।
৩.
সামাজিক বন্ধন: গ্রামীণ সমাজে
পারস্পরিক সহযোগিতা ও আন্তরিকতা দৃঢ়। মানুষ একে অপরের বিপদে-আপদে পাশে থাকার ফলে সামাজিক
বন্ধন শক্তিশালী হয়। সামাজিক উৎসব, বিবাহ, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও মিলনমেলা গ্রামের মানুষের
জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
৪.
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য: গ্রামীণ সম্প্রদায়ের
মানুষ ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি, লোকসংগীত, বাউল গান, পালাগান, নাটক, লোককাহিনি এবং ধর্মীয়
রীতিনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বিভিন্ন উৎসব, পূজা-পার্বণ ও মেলা এ সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক
জীবনের অপরিহার্য অংশ। আধুনিকতার প্রভাব থাকলেও গ্রামীণ সমাজে এখনও লোকজ সংস্কৃতির
প্রভাব প্রবল।
৫.
সহজ-সরল জীবনধারা: শহরের তুলনায়
গ্রামীণ মানুষের জীবনধারা অনেক সহজ ও সরল। তারা প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলে
এবং অতিরিক্ত ভোগ-বিলাসিতা থেকে দূরে থাকে। গ্রামীণ জীবনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার
সীমিত হলেও তা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এখনও গ্রামের মানুষ ঐতিহ্যবাহী জীবনধারার
ওপর বেশি নির্ভরশীল।
৬.
পরিবারকেন্দ্রিকতা: গ্রামীণ সমাজ
পরিবার-কেন্দ্রিক, যেখানে একান্নবর্তী পরিবারের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। পরিবারের
সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং পারিবারিক মূল্যবোধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি শ্রদ্ধা, ছোটদের প্রতি স্নেহ, এবং পারিবারিক ঐতিহ্য রক্ষার প্রবণতা
গ্রামীণ সমাজের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
৭.
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য: শিক্ষা
ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে গ্রামীণ এলাকাগুলো শহরের তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে। গ্রামীণ
এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার ঘটলেও উচ্চশিক্ষার সুযোগ সীমিত। তেমনি স্বাস্থ্যসেবা
শহরের তুলনায় কম উন্নত। যদিও সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের ফলে বর্তমানে গ্রামগুলোতে
স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জীবনযাত্রা
মানও ক্রমান্বয়ে উন্নত হচ্ছে।
৮.
প্রকৃতিনির্ভর জীবন: গ্রামীণ
জনগোষ্ঠী সরাসরি প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। কৃষিকাজ, গবাদিপশু পালন, মৎস্যচাষ ও অন্যান্য
জীবিকার জন্য তাদের বৃষ্টি, নদী, মাটি ও আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করতে হয়। জলবায়ুর পরিবর্তন,
খরা, বন্যা বা অতিবৃষ্টি তাদের জীবনযাত্রায় সরাসরি প্রভাব ফেলে।
উপসংহার:
গ্রামীণ সম্প্রদায় প্রাকৃতিক ও সামাজিক
বন্ধনের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা একটি ঐতিহ্যবাহী সমাজ ব্যবস্থা। যদিও নগরায়ণ, আধুনিক
প্রযুক্তি ও শিল্পায়নের প্রভাব গ্রামীণ জীবনে পরিবর্তন আনছে, তবে এ সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক
ও সামাজিক মূল্যবোধ এখনও অটুট রয়েছে। কৃষিনির্ভরতা, পারস্পরিক সহযোগিতা, ঐতিহ্য ও
সহজ-সরল জীবনধারা গ্রামীণ সম্প্রদায়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। উন্নয়ন প্রকল্প ও শিক্ষার
প্রসারের মাধ্যমে এই সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন সম্ভব।
4