এথনিক গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য সমূহ লিখ

Shihabur Rahman
এথনিক গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য সমূহ লিখ।
ভূমিকা: এথনিক গোষ্ঠী বা নৃগোষ্ঠী হলো এমন জনগোষ্ঠী, যারা অভিন্ন ভাষা,
সংস্কৃতি, জীবনধারা ও ঐতিহ্যের মাধ্যমে নিজেদের স্বতন্ত্র পরিচয় বহন করে। এ জনগোষ্ঠীর
ধর্ম, ভাষা, খাদ্যাভ্যাস, সামাজিক আচার-আচরণ এবং ঐতিহাসিক পটভূমির ওপর ভিত্তি করে তাদের
বৈশিষ্ট্য নিরূপণ করা যায়। বাংলাদেশে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, মণিপুরী, সাঁওতালসহ
বহু নৃগোষ্ঠী রয়েছে, যারা প্রত্যেকেই নিজেদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধারণ করে।
এথনিক
গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্যসমূহঃ প্রতিটি
এথনিকগোষ্ঠীর কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যার মাধ্যমে তারা একে অপর থেকে স্বতন্ত্ররূপে
আত্মপ্রকাশ করে। এথনিক গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্যসমূ নিম্নরূপ—
১.
অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য: প্রত্যেক
এথনিক গোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রয়েছে, যা তাদের স্বতন্ত্র পরিচয় কে তুলে
ধরে। তাদের ভাষা, ধর্ম, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক, আচার-অনুষ্ঠান ও জীবনধারার মাঝে এক ধরনের
ঐক্য বজায় রাখে। যেমন: চাকমাদের ঐতিহ্যবাহী
পোশাক, মারমাদের সাংগ্রাই উৎসব, মণিপুরীদের রাস নৃত্য ইত্যাদি।
২.
সাধারণ ভাষা: প্রত্যেক নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা সাধারণত
একটি নির্দিষ্ট ভাষায় কথা বলে যা তাদের সাংস্কৃতিক ঐক্যকে শক্তিশালী করে। ভাষার মাধ্যমে
তাদের ইতিহাস, লোককাহিনি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষিত হয়। যেমন: চাকমারা চাকমা ভাষায়, ত্রিপুরারা ককবরক ভাষায় এবং মণিপুরীরা মৈতৈ
ভাষায় কথা বলে।
৩.
ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচার-অনুষ্ঠান: নৃগোষ্ঠীগুলোর
নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাস ও উপাসনার পদ্ধতি রয়েছে যা তাদের জীবনযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ
অংশ। তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রবাহিত হয়। যেমন: রাখাইন ও মারমারা মূলত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী,
খাসিয়ারা খ্রিস্টধর্ম এবং গারোরা মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার অনুসারী।
৪.
আত্মপরিচয়ের অনুভূতি: নৃগোষ্ঠীর
প্রতিটি সদস্য নিজেদের একটি বৃহত্তর সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পরিবারের অংশ মনে করে। তারা
সকলে তাদের নিজস্ব রীতিনীতি, কৃষ্টি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে সচেষ্ট থাকে। যেমন: সাঁওতালরা তাদের আত্মপরিচয়ের প্রতীক হিসেবে
নিজস্ব নৃত্য ও বাদ্যযন্ত্র সংরক্ষণ করে।
৫.
পারিবারিক ও সামাজিক কাঠামো: নৃগোষ্ঠীগুলোর
মধ্যে শক্তিশালী পারিবারিক বন্ধন থাকে। তাদের সমাজব্যবস্থা পিতৃতান্ত্রিক বা মাতৃতান্ত্রিক
হতে পারে। পরিবার ও সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও নির্ভরশীলতা বিদ্যমান।
যেমন: গারোদের মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায়
কন্যার মাধ্যমে সম্পত্তির উত্তরাধিকার নির্ধারিত হয়।
৬.
নির্দিষ্ট ভৌগোলিক বিস্তৃতি: নৃগোষ্ঠীগুলো
সাধারণত নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলে বসবাস করে এবং তাদের জীবনধারা সেই অঞ্চলের জলবায়ু
ও ভূপ্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে চলে। যেমন: পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমা, সিলেট অঞ্চলে খাসিয়া বসবাস করে।
৭.
নির্দিষ্ট জীবিকা ও অর্থনীতি: নৃগোষ্ঠীগুলোর
জীবিকা সাধারণত তাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে। কৃষিকাজ, পশুপালন, তাঁতবয়ন, শিকার
এবং হস্তশিল্প তাদের প্রধান জীবিকার মাধ্যম। যেমন:
মারমারা জুম চাষ করে, খাসিয়ারা পান চাষের জন্য বিখ্যাত, আর মণিপুরীরা তাঁতশিল্পের মাধ্যমে
জীবিকা নির্বাহ করে।
৮.
সামাজিক বিধান ও প্রথা: প্রতিটি
নৃগোষ্ঠীর নিজস্ব সামাজিক বিধান ও নিয়ম-কানুন থাকে যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রবাহিত
হয়।
৯.
ঐতিহাসিক পটভূমি ও কিংবদন্তি: প্রত্যেক
নৃগোষ্ঠীর নিজস্ব ইতিহাস, কিংবদন্তি ও পূর্বপুরুষদের নিয়ে বিভিন্ন বিশ্বাস থাকে যা
তাদের স্বতন্ত্র পরিচয়কে দৃঢ় করে। যেমন:
চাকমারা একসময় আরাকান রাজ্যের অধিবাসী ছিল এবং পরবর্তীতে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসতি
স্থাপন করে।
১০.
ঐতিহ্যবাহী উৎসব ও সাংস্কৃতিক রীতি: প্রত্যেক
নৃগোষ্ঠীর নিজস্ব উৎসব, নৃত্য, গান ও শিল্পকর্মের মাধ্যমে তাদের পরিচয় প্রকাশ পায়।
যেমন: মারমাদের সাংগ্রাই উৎসব, ত্রিপুরাদের
বৈসুক উৎসব এবং সাঁওতালদের সোহরাই উৎসব তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিফলন।
উপসংহার:
পরিশেষে বলা যায়, নৃগোষ্ঠীগুলো তাদের
সংস্কৃতি, ভাষা ও ঐতিহ্যের মাধ্যমে বিশ্ব সভ্যতাকে সমৃদ্ধ করেছে। কিন্তু আধুনিক বিশ্বায়ন
ও সামাজিক পরিবর্তনের ফলে অনেক নৃগোষ্ঠী তাদের ঐতিহ্য হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। ভবিষ্যৎ
প্রজন্ম যেন তাদের ঐতিহ্য বজায় রাখতে পারে তাই নৃগোষ্ঠীগুলোর সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও প্রচারে
প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।
3
4
সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণী বলতে কি বুঝ?

Shihabur Rahman
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কি?

Shihabur Rahman
মরণশীলতা ও প্রজননশীলতা বলতে কি বুঝ?

Shihabur Rahman
উপনিবেশবাদ কি?

Shihabur Rahman
গ্রামীণ সমাজের / সম্প্রদায়ের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট ব্যাখ্যা কর।
