বাংলাদেশের দরিদ্র বিমোচনে বেসরকারি সংস্থার সমূহের ভূমিকা মূল্যায়ন কর।

Avatar

Shihabur Rahman

Academic

বাংলাদেশের দরিদ্র বিমোচনে বেসরকারি সংস্থার সমূহের ভূমিকা মূল্যায়ন কর। 

ভূমিকা: বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। দেশের বড় সমস্যা দারিদ্র্য। সরকার দারিদ্র্য দূর করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। তবে, একা সরকারের পক্ষে এই কাজ করা কঠিন। তাই, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (NGO) দরিদ্র বিমোচনে কাজ করছে। তারা ক্ষুদ্রঋণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান ও নারীর ক্ষমতায়নসহ নানা ক্ষেত্রে কাজ করছে। তাদের প্রচেষ্টায় অনেক দরিদ্র মানুষ স্বাবলম্বী হচ্ছে। নিচে দরিদ্র বিমোচনে বেসরকারি সংস্থাসমূহের ভূমিকা আলোচনা করা হলো।

 

১. ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম: বেসরকারি সংস্থা যেমন ব্র্যাক, গ্রামীণ ব্যাংক দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করে থাকে। এই ঋণ পেয়ে দরিদ্র জনগণ ছোট ব্যবসা শুরু, কৃষিকাজে বিনিয়োগ বা আত্মনির্ভরশীল হতে যেকোন ক্ষেত্রেই বিনিয়োগ করতে পারে। ক্ষুদ্রঋণের ফলে তাদের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে যা দারিদ্র্য হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি, এই ঋণের সুদহার তুলনামূলক কম হওয়ায় তারা সহজেই ঋণ পরিশোধ করতে পারে। 

 

২. কর্মসংস্থান সৃষ্টি: NGO-গুলো দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে। তারা নানা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করে। সেলাই, হস্তশিল্প, কৃষি ও অন্যান্য উৎপাদনশীল কাজে তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এতে তারা নিজেদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারে এবং অন্যদেরও কাজের সুযোগ করতে পারে  যা ফলে দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনতে সহায়তা করে।

 

৩. শিক্ষা বিস্তার: বেসরকারি সংস্থাগুলো দরিদ্র শিশুদের জন্য স্কুল স্থাপন করে। তারা বিনামূল্যে বই, খাতা ও অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করে। অনেক NGO আউট-অফ-স্কুল শিশুদের জন্য বিকল্প শিক্ষার ব্যবস্থা করে, যা তাদের শিক্ষার মূলধারায় ফিরিয়ে আনে। এতে দরিদ্র পরিবারের শিশুরা শিক্ষিত হয়ে ভবিষ্যতে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে পারে।

 

৪. নারীর ক্ষমতায়ন: নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে NGO-গুলো নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। তারা নারীদের দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ দেয়, ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করে এবং বিভিন্ন ব্যবসায়িক উদ্যোগে সহায়তা প্রদান করে। নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হলে তারা পরিবারে ও সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। নারীদের ক্ষমতায়ন দারিদ্র্য হ্রাসে বড় ভূমিকা রাখে।

 

৫. স্বাস্থ্যসেবা প্রদান: দরিদ্র জনগণের জন্য NGO-গুলো বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে। তারা গ্রামীণ এলাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করে এবং ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা সেবা চালু করেছে। মাতৃসেবা, শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি ও সাধারণ চিকিৎসার ব্যবস্থা করে তারা দরিদ্র জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে। এতে রোগের প্রকোপ কমে এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

 

৬. কৃষি উন্নয়ন: বেসরকারি সংস্থাগুলো দরিদ্র কৃষকদের উন্নত কৃষি পদ্ধতি শিক্ষা দেয়। তারা উন্নত মানের বীজ, সার ও আধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহ করে। কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে তাদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এতে কৃষির মাধ্যমে তাদের আয় বৃদ্ধি পায় এবং দারিদ্র্য হ্রাস হয়।

 

৭. নারী ও শিশু সুরক্ষা: NGO-গুলো নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করে। তারা নারীদের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ প্রদান এবং আইনি সহায়তা প্রদান করে। শিশুদের শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি, মানবপাচার রোধ ও শারীরিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে কাজ করে তারা নারীদের ও শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করছে।   

 

৮. বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন: অনেক NGO দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। তারা নলকূপ, টয়লেট ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে সাহায্য করছে। এতে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ কমে এতে  জনস্বাস্থ্য ভালো থাকে।

 

৯. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা: NGO-গুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য প্রদান করে। তারা দুর্যোগকালীন আশ্রয়, খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে। এছাড়া, সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে জনগণকে দুর্যোগ মোকাবিলার কৌশল শেখায়। এতে দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমে যায়।

 

১০. সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি: বেসরকারি সংস্থাগুলো স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ ও মানবাধিকার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে।তারা দারিদ্র্য পীড়িত জনগোষ্ঠীকে তাদের অধিকার ও সুযোগ সম্পর্কে অবহিত করে। সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী সরকারি ও বেসরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণে সক্ষম হয়।

 

১১. কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ: NGO-গুলো দরিদ্র যুবকদের জন্য বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। ইলেকট্রিক কাজ, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, দর্জির কাজসহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের দক্ষ করে তোলে। এতে তারা চাকরি পায় এবং স্বাবলম্বী হয়।

 

১২. পরিবেশ উন্নয়ন: বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাসমূহ পরিবেশ রক্ষায় কাজ করছে। তারা বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহিত করে। এটি দীর্ঘমেয়াদে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নত করে।

 

১৩. ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা সৃষ্টি: বেসরকারি সংস্থাসমূহ দরিদ্র জনগণকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা গড়ে তুলতে সহায়তা করে। প্রশিক্ষণ ও ঋণ প্রদান করে তাদের স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করে। এতে দারিদ্র্য হ্রাস পায়।

 

১৪. পথশিশু পুনর্বাসন: NGO-গুলো পথশিশুদের আশ্রয়, শিক্ষা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে। সুবিধা বঞ্চিত শিশুরা যেন যথাযথ তদারকির সাথে তারা তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে সেই লক্ষ্যে বেসরকারি সংস্থাসমূহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করে। এতে পথশিশুরা খুব সহজেই স্বাভাবিক জীবনে পদার্পণের সুযোগ পায়।

 

১৫. মানবাধিকার রক্ষা: বেসরকারি সংস্থা সমূহ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার নিশ্চিতে কাজ করে। তারা আইনি সহায়তা, নারীর অধিকার, শিশুশ্রম রোধ ও সামাজিক বৈষম্য দূর করতে প্রচারাভিযান চালায়।

 

১৬. সরকারি উদ্যোগের সহায়ক ভূমিকা: বেসরকারি সংস্থাগুলো সরকারি উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহায়তা করে। তারা সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কাজ করে। এতে উন্নয়ন কার্যক্রমের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।

 

উপসংহার: বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে বেসরকারি সংস্থাগুলোর অবদান অপরিসীম। তারা ক্ষুদ্রঋণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান, কৃষি উন্নয়নসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিতে অনস্বীকার্য ভূমিকা পালন করে। তাদের প্রচেষ্টায় অনেক দরিদ্র মানুষ দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাচ্ছে। তাই আমাদের প্রত্যাশা সরকার ও বেসরকারি সংস্থা সমূহের সমন্বিত প্রচেষ্টায় অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ একটি দারিদ্র্যমুক্ত দেশে পরিণত হবে ইনশাল্লাহ। 

 

Links

Home

Exams

Live Exam

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD