চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্য

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্যগুলো লেখ। 

ভূমিকা: “একশালা” “পাঁচশালা”  “দশশালা” বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়ে লর্ড কর্নওয়ালিসের (১৭৩৮-১৮০৫) প্রস্তাবনা মেনে নিয়ে ১৭৯৩ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ব্রিটিশ ভারতে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেন। এটি মূলত ভূমি রাজস্ব আদায়ের একটি মাধ্যম। এর মাধ্যমে জমিদারদেরকে জমির মালিক এবং কৃষকদেরকে তাদের প্রজা রূপে রূপায়িত করা হয়। East India Company (১৬০০-১৮৭৪) ১৭৬৫ সালে দিল্লীর মোগল সম্রাট শাহ আলমের নিকট থেকে বার্ষিক মাত্র ২৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বাংলা, বিহার এবং উড়িষ্যার রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতা লাভ করে। তারা এ ভারতবর্ষের মুনাফা লুন্ঠনই  ছিল তাদের উদ্দেশ্য। অতঃপর তারা বিভিন্ন আইন প্রচলনের মাদ্ধমে ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থাকে স্থায়ী করে তাদের উদ্দেশ্য সফল করে। 

আরো পড়ুনঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘Spoil system’ কী?

প্রধান বৈশিষ্ট্য:

১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিস কর্তৃক প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ছিল ব্রিটিশ ভারতের বাংলা, বিহার, এবং উড়িষ্যা তে ভূমি রাজস্ব আদায়ের একটি ব্যবস্থা। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যনিম্নরূপ।

1. স্থায়ী মালিকানা: এই ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা জমিদারদেরকে জমির স্থায়ী মালিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এর ফলে তারা জমি বন্ধক, বিক্রয়, দান বা উত্তরাধিকারসূত্রে হস্তান্তর করতে পারতেন।

2. রাজস্ব আদায়ের নির্ধারিত পরিমান: জমিদারদেরকে প্রতি বছর নির্ধারিত পরিমাণ রাজস্ব (খাজনা) সরকারকে প্রদান করতে হত। এই রাজস্বের পরিমাণ জমির উর্বরতা ও আয়ের উপর নির্ধারণ করা হত। 

3. সরকারের ভূমিকা: চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অধীনে সরকার কেবল রাজস্ব আদায়কারী হিসেবে কাজ করত। জমি ব্যবস্থাপনা, কৃষি উন্নয়ন, প্রজাদের অধিকার রক্ষা – এই বিষয়গুলোতে সরকারের তেমন কোন ভূমিকা ছিল না।

4. জমিদারদের ক্ষমতা বৃদ্ধি: এই ব্যবস্থার মাধ্যমে জমিদারদের ক্ষমতা ও প্রভাব বৃদ্ধি পায়। তারা প্রজাদের উপর নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে পারত।

আরো পড়ুনঃ Political Organization and Political System of UK and USA Suggestion (2021-22)

5. প্রজাদের শোষণ: জমিদাররা প্রজাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়, বিভিন্ন অবৈধ কর ধার্য, এবং শোষণের মাধ্যমে নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধি করতে থাকে।

6. কৃষিক্ষেত্রের স্থবিরতা: চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে কৃষিক্ষেত্রের উন্নয়ন ব্যাহত হয়। জমিদারদের উদাসীনতা, প্রজাদের শোষণ, এবং ঋণের বোঝা কৃষিক্ষেত্রকে স্থবির করে দেয়।

7. দারিদ্র্য বৃদ্ধি: ক্রমবর্ধমান শোষণ ও ঋণের বোঝার কারণে প্রজাদের দারিদ্র্য বৃদ্ধি পায়। অনেক কৃষক জমি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

8. ঔপনিবেশিক শোষণ বৃদ্ধি: এই ব্যবস্থা ঔপনিবেশিক শোষণকে আরও তীব্র করে তোলে। ব্রিটিশ সরকার জমিদারদের মাধ্যমে ভারতীয় সম্পদ লুণ্ঠন করে।

আরো পড়ুনঃ যুক্তরাজ্যের আইনসভার গঠন

উপসংহার: চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শোষণের একটি হাতিয়ার। এই ব্যবস্থা জমিদারদের ক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রজাদের শোষণ, এবং কৃষিক্ষেত্রের স্থবিরতার মাধ্যমে ভারতীয় সম্পদ লুণ্ঠনে কোম্পানি প্রশাসকদের সহযোগিতা করে। 

Riya Akter
Riya Akter
Articles: 59