ক্যাবিনেটের একনায়কতন্ত্র কি?
ভূমিকা: ক্যাবিনেটের একনায়কতন্ত্র হলো এমন একটি শাসনব্যবস্থা যেখানে রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা একজন ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে। এই ব্যক্তি সাধারণত প্রধানমন্ত্রী, যিনি সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন না, বরং সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে মনোনীত হন। তিনি তার দলের সমর্থনে সরকার গঠন করেন এবং রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। এই ধরনের শাসনব্যবস্থা অনেক গণতান্ত্রিক দেশে বিদ্যমান এবং তা ক্যাবিনেটের মাধ্যমে কার্যকর হয়।
আরো পড়ুনঃ ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল ও গুরুত্ব
ক্যাবিনেটের একনায়কতন্ত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য:
১. প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব: ক্যাবিনেটের একনায়কতন্ত্রে সরকারের প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি একজন সংসদ সদস্য, তবে সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন না। তাকে সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে মনোনীত করা হয়।
২. সরকার গঠন: প্রধানমন্ত্রী তার দলের সমর্থনে সরকার গঠন করেন। সরকারের মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর দল থেকে নির্বাচিত হন, এবং তাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ব্যাপক প্রভাব থাকে।
৩. সার্বভৌম ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ: এই শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে। তিনি আইনসভা, বিচার বিভাগ এবং প্রশাসনের প্রধান হিসেবে কাজ করেন।
৪. দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা: ক্যাবিনেটের একনায়কতন্ত্রে প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রয়েছে। যেহেতু তার হাতে বেশিরভাগ ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকে, তাই তিনি সরকারের কার্যক্রম পরিচালনা এবং আইন প্রণয়ন দ্রুততার সঙ্গে করতে পারেন।
উদাহরণসমূহ:
ক্যাবিনেটের একনায়কতন্ত্রের উদাহরণ হিসেবে বেশ কয়েকটি দেশকে উল্লেখ করা যায়, যেমন:
- যুক্তরাজ্য: যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর হাতে বেশিরভাগ ক্ষমতা থাকে এবং তিনি সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে কাজ করেন।
- ভারত: ভারতের প্রধানমন্ত্রী সংসদের নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে ক্যাবিনেট পরিচালনা করেন।
- জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া: এই দেশগুলোতেও ক্যাবিনেটের একনায়কতন্ত্রের একই ধরণের গঠন বিদ্যমান।
আরো পড়ুনঃ Sociology of Bangladesh Suggestion Session (2021-22)
ক্যাবিনেটের একনায়কতন্ত্রের সুবিধা:
১. স্থিতিশীলতা: এই শাসনব্যবস্থায় সরকার স্থিতিশীল থাকে কারণ প্রধানমন্ত্রী তার দলের সমর্থনে সরকার পরিচালনা করেন। ফলে সরকারে অভ্যন্তরীণ সংঘাত কম হয় এবং শাসনপ্রক্রিয়া সহজ হয়।
২. কার্যকারিতা বৃদ্ধি: প্রধানমন্ত্রীর হাতে সার্বভৌম ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকার কারণে তিনি দ্রুত এবং কার্যকরভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এর ফলে প্রশাসনিক কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায়।
৩. দলের ঐক্য: প্রধানমন্ত্রীর শক্তিশালী নেতৃত্বের কারণে দলের মধ্যে ঐক্য বজায় থাকে। দলের সদস্যরা সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন, যা দলীয় ঐক্য বজায় রাখতে সহায়ক হয়।
ক্যাবিনেটের একনায়কতন্ত্রের সমালোচনা:
১. জনগণের ক্ষমতা কমে যাওয়া: ক্যাবিনেটের একনায়কতন্ত্রের সমালোচকরা বলেন যে, জনগণের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত না হওয়ায় জনগণের ভোটের মূল্য কমে যায়। প্রধানমন্ত্রীকে সংসদ নির্বাচন করে, ফলে জনগণের সরাসরি তাকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
২. সাংবিধানিক ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা: এই শাসনব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর হাতে ক্ষমতা অতিরিক্ত কেন্দ্রীভূত থাকে, যা কখনো কখনো সাংবিধানিক ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা তৈরি করতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধ মতামত প্রকাশ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
৩. স্বাধীনতার অভাব: প্রধানমন্ত্রীর দলের সদস্যদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ কম থাকে। দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধী মতামত প্রায়শই চাপা পড়ে যায়, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ
উপসংহার: ক্যাবিনেটের একনায়কতন্ত্র শাসনব্যবস্থা বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশে কার্যকর হলেও এর কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। যদিও এটি স্থিতিশীলতা এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে সহায়ক, তবে জনগণের সরাসরি প্রভাব এবং ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে। তা সত্ত্বেও, এটি আধুনিক শাসনব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।