ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা কর।

Shihabur Rahman
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি
আলোচনা কর।
ভূমিকা:
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্যের
সরকার প্রধান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মূলত প্রথাগত নিয়ম, সাংবিধানিক
রীতি এবং কিছু লিখিত আইনের মাধ্যমে তাঁর ক্ষমতা ও কার্যাবলি নির্ধারিত হয়। তবে, তাঁর
ক্ষমতা ও কার্যাবলি সুস্পষ্ট লিখিত আইনের মাধ্যমে উল্লেখ নেই। ব্রিটেনের শাসনব্যবস্থা
একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র, যেখানে প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকারের কার্যনির্বাহী প্রধান।
তিনি কমন্স সভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে নিয়োগ পান এবং মন্ত্রিসভা গঠন ও নেতৃত্ব
প্রদান করেন।
ব্রিটিশ
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি: ব্রিটিশ
প্রধানমন্ত্রী নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। যথা নিমরূপ;
১.
মন্ত্রিসভা গঠন ও পুনর্গঠন: প্রধানমন্ত্রী
সরকার পরিচালনার জন্য একটি কার্যকর মন্ত্রিসভা গঠন করেন। তিনি শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রীদের
নিয়োগ দেন, যাদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী
ইত্যাদি । প্রধানমন্ত্রী চাইলে মন্ত্রীদের বরখাস্ত করতে এবং প্রয়োজনে দপ্তর পুনর্বণ্টন
করতে পারেন। এটি তাকে প্রশাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে বড় ধরনের কর্তৃত্ব প্রদান করে।
২.
মন্ত্রিসভার নেতৃত্ব: প্রধানমন্ত্রী
মন্ত্রিসভার বৈঠক পরিচালনা এবং জাতীয় নীতিমালা নির্ধারণ করেন। মন্ত্রিসভার কাজের ধরন,
কোন বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন তিনি তা নির্ধারণ করেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত
করতে তাঁর মতামত খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৩.
নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়ন: প্রধানমন্ত্রী
তার মন্ত্রিসভার মাধ্যমে জাতীয় নীতিগুলোর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করেন। তিনি
অর্থনীতি, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ, পররাষ্ট্রনীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ
সিদ্ধান্ত নেন। ব্রিটেনের স্বাস্থ্যনীতি নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রী প্রভাবশালী ভূমিকা
পালন করেন, যেমন COVID-19 মহামারির সময় স্বাস্থ্যবিধি ও টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নে
তিনি নেতৃত্ব দেন।
৪.
পার্লামেন্টের নেতা: প্রধানমন্ত্রী
হাউস অব কমন্সে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে সরকারের প্রতিনিধি। তিনি আইন প্রণয়ন
ও সংশোধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং সরকারের নীতির পক্ষে পার্লামেন্ট সদস্যদের
সমর্থন নিশ্চিত করেন। পার্লামেন্টে বিতর্ক পরিচালনা ও বিরোধী দলগুলোর প্রশ্নের জবাব
দেওয়ার দায়িত্বও তার।
৫.
নিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষমতা: প্রধানমন্ত্রী
উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, যেমন উচ্চ আদালতের বিচারক, রাষ্ট্রদূত, সরকারি সচিব, সেনাবাহিনীর
প্রধান, পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ইত্যাদির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বড় ভূমিকা পালন করেন।
যদিও নিয়োগ আনুষ্ঠানিকভাবে রাজা বা রানীর মাধ্যমে হয়, কিন্তু বাস্তবে প্রধানমন্ত্রী
ও তার মন্ত্রিসভা এসব সিদ্ধান্ত নেয়।
৬.
রাজা বা রানীর প্রধান পরামর্শদাতা: ব্রিটিশ
রাজতন্ত্র সাংবিধানিক, যেখানে রাজার রাজনৈতিক ক্ষমতা সীমিত। প্রধানমন্ত্রী নিয়মিতভাবে
রাজা বা রানীর সাথে বৈঠক করেন, যেখানে তিনি সরকারের কাজের অগ্রগতি ও গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত
বিষয়ে পরামর্শ দেন। এটি মূলত একটি ঐতিহ্যগত ব্যবস্থা, যেখানে রাজা/রানী রাজনৈতিক বিষয়ে
হস্তক্ষেপ করেন না, তবে নিয়মিত আপডেট পেয়ে থাকেন।
৭.
পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা: সংবিধান
অনুযায়ী, পার্লামেন্টের নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। তবে, প্রধানমন্ত্রী যদি মনে করেন যে
নতুন নির্বাচন প্রয়োজন, তাহলে তিনি রানীর অনুমতি নিয়ে পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে পারেন।
এর ফলে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যা সরকারের বৈধতা যাচাইয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তবে, Fixed-term Parliaments Act 2011 আইন অনুযায়ী এখন আর প্রধানমন্ত্রীর এই ক্ষমতা
সীমিত করা হয়েছে।
৮.
বাহ্যিক সম্পর্ক ও পররাষ্ট্রনীতি: প্রধানমন্ত্রী
আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও পররাষ্ট্রনীতির মূল কারিগর। তিনি বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে
সুসম্পর্ক বজায় রাখা, চুক্তি স্বাক্ষর করা এবং ব্রিটেনের বৈদেশিক নীতির দিকনির্দেশনা
নির্ধারণ করেন।
৯.
সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ডার: প্রধানমন্ত্রী
ব্রিটেনের সশস্ত্র বাহিনীর কার্যক্রমের সর্বোচ্চ তত্ত্বাবধায়ক। যুদ্ধ ঘোষণা, সামরিক
নীতি নির্ধারণ এবং প্রতিরক্ষা বাজেট নির্ধারণে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। যদিও প্রতিরক্ষা
মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করে, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর ওপর
নির্ভর করে।
১০.
জরুরি অবস্থায় ক্ষমতা: জাতীয়
সংকট, যুদ্ধ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় প্রধানমন্ত্রী বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন।
তিনি সামরিক আইন জারি, জরুরি অবস্থা ঘোষণা, আইন কার্যকর করা এবং প্রশাসনিক নীতিমালা
পরিবর্তন করতে পারেন।
১১.
অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণ: প্রধানমন্ত্রী
যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেন। বাজেট পরিকল্পনা, কর
ব্যবস্থা নির্ধারণ এবং সরকারি ব্যয় নির্ধারণে তিনি অর্থমন্ত্রীর সাথে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত
নেন। ব্রিটেনের বার্ষিক বাজেট পাস করাতে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
১২.
দলীয় নেতা হিসেবে ভূমিকা: প্রধানমন্ত্রী
দলীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি তার দলকে নেতৃত্ব দেন, নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণ
করেন এবং দলের সমর্থন নিশ্চিত করেন। দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সরকারের কার্যক্রম পরিচালনায়
সমন্বয় রক্ষা করাই তার অন্যতম প্রধান দায়িত্ব।
১৩.
জনমত গঠন: প্রধানমন্ত্রী জনসাধারণের মতামত গ্রহণ
ও গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। গণমাধ্যম, সংবাদ সম্মেলন এবং বিভিন্ন প্রচার
মাধ্যমের মাধ্যমে তিনি সরকারের নীতির পক্ষে জনসমর্থন আদায় করেন। কোনো বৃহৎ নীতি পরিবর্তনের
আগে তিনি জনগণের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করার কৌশল গ্রহণ করেন।
১৪.
বিচার বিভাগের সাথে সম্পর্ক: প্রধানমন্ত্রী
বিচার বিভাগ ও সরকারের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করেন। তিনি উচ্চপদস্থ বিচারকদের নিয়োগে পরামর্শ
দেন এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। যদিও বিচার বিভাগ সরকার থেকে স্বাধীন,
তবুও প্রধানমন্ত্রী বিচার সংক্রান্ত আইনি সংস্কার প্রস্তাব রাখতে পারেন।
১৫.
প্রশাসনিক সংস্কার: সরকারি কার্যক্রমের
দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রশাসনিক সংস্কার চালু করতে পারেন। দুর্নীতি দমন,
সরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য তিনি বিভিন্ন
পরিবর্তন আনতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, সরকারি ব্যয় হ্রাস এবং প্রশাসনিক কাঠামো পুনর্গঠন
করাই তার একটি বড় কাজ।
১৬.
সাংবিধানিক পরিবর্তন: প্রধানমন্ত্রী
যখন প্রয়োজন মনে করলে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব দিতে পারেন। তাঁর প্রস্তাবের পরিপেক্ষিতে
পার্লামেন্টে আলোচনার মাধ্যমে এটি অনুমোদিত হয়।
উপসংহার:
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী একজন গুরুত্বপূর্ণ
ব্যক্তি, যার ক্ষমতা এবং কার্যাবলি ব্রিটেনের রাজনীতি, অর্থনীতি, প্রশাসন এবং আন্তর্জাতিক
সম্পর্কের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। যদিও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সংবিধান দ্বারা আনুষ্ঠানিকভাবে
নির্ধারিত নয়, তবে এটি প্রথাগতভাবে গড়ে উঠেছে এবং সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে।
একজন দক্ষ প্রধানমন্ত্রী দেশের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে বিশাল অবদান রাখতে পারেন।
12
সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণী বলতে কি বুঝ?

Shihabur Rahman
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কি?

Shihabur Rahman
মরণশীলতা ও প্রজননশীলতা বলতে কি বুঝ?

Shihabur Rahman
উপনিবেশবাদ কি?

Shihabur Rahman
গ্রামীণ সমাজের / সম্প্রদায়ের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট ব্যাখ্যা কর।
