বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা বলতে কী বুঝ?

Shihabur Rahman
বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা বলতে কী বুঝ?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এর তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।
সূচনা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা
(Judicial Review) গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি সুপ্রিম
কোর্টের একটি বিশেষ ক্ষমতা, যার মাধ্যমে আদালত সরকারি আইন, নীতি বা কার্যক্রম সংবিধানের
সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা পরীক্ষা করে। যদি আদালত কোনো আইনকে সংবিধানবিরোধী মনে
করে, বাতিল করার ক্ষমতা রাখে। বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে এবং
সরকারের ক্ষমতা সীমিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
বিচার
বিভাগীয় পর্যালোচনার সংজ্ঞা: বিচার
বিভাগীয় পর্যালোচনা হল আদালতের ক্ষমতা, যার মাধ্যমে সরকারি আইন, নীতি এবং কার্যক্রমের
সাংবিধানিকতা যাচাই করা হয়। যদি কোনো আইন সংবিধানবিরোধী হয়, তবে আদালত সেটিকে অকার্যকর
ঘোষণা করতে পারে। এটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে সুরক্ষিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন
করে।
মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এর তাৎপর্য:
১. বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার সূচনা: মার্কিন ইতিহাসে ১৮০৩ সালে মারবেরি বনাম মাদিসন মামলার মাধ্যমে
বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়। চিফ জাস্টিস জন মারশাল এই মামলায়
সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা নিশ্চিত করেন এবং আদালতকে সংবিধান অনুসারে কার্যক্রমের পর্যালোচনা
করার অধিকার প্রদান করেন, যা আইন প্রণয়ন এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব
ফেলে।
২. সংবিধানের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখা: বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার মাধ্যমে সংবিধানকে সর্বোচ্চ আইন
হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়, যা সকল আইন এবং কার্যক্রমের প্রেক্ষিতে একটি মানদণ্ড হিসেবে
কাজ করে। কংগ্রেস বা রাষ্ট্রপতির যেকোনো সিদ্ধান্ত সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ
কিনা সুপ্রিম কোর্ট তা যাচাই করে। এটি সংবিধানের সর্বোচ্চতা বজায় রাখে।
৩.
ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা: বিচার
বিভাগীয় পর্যালোচনার মাধ্যমে শক্তির বিচ্ছিন্নকরণের প্রক্রিয়া কার্যকরভাবে কাজ করে।
নির্বাহী বা আইনসভা শাখা যদি সাংবিধানিক সীমা অতিক্রম করে, তবে বিচার বিভাগ তাদের সিদ্ধান্ত
বা আইনকে বাতিল করতে পারে। এটি গণতান্ত্রিক কাঠামোকে শক্তিশালী করতে একতরফা ক্ষমতা
গ্রহণের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী সুরক্ষা হিসেবে কাজ করে।
৪.
সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের গুরুত্ব: বিচার
বিভাগীয় পর্যালোচনায় সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি সংবিধান নির্ধারিত
ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে প্রভাবশালী সিদ্ধান্ত দেয়। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা, কংগ্রেসের
আইন এবং রাজ্য সরকারের কার্যক্রমের সাংবিধানিকতা যাচাই করে। সুপ্রিম কোর্টের রায় দীর্ঘমেয়াদী
রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিবর্তনের দিক উন্মোচন করে।
৫.
সংবিধানের সমর্থন নিশ্চিত করা: বিচার
বিভাগীয় পর্যালোচনা সংবিধানকে শক্তিশালী এবং কার্যকর রাখে। এটি নিশ্চিত কর, যে কোনো
আইন বা কার্যক্রম সংবিধানের মধ্যে না থাকলে তা বৈধ হতে পারে না। তাই সংবিধানিক অধিকারের
সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে।
৬.
মানবাধিকার সুরক্ষা: বিচার
বিভাগীয় পর্যালোচনার মাধ্যমে মানবাধিকার রক্ষা করা হয়। যদি কোনো আইন নাগরিকদের অধিকার
লঙ্ঘন করে, তবে আদালত সেটিকে বাতিল করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ব্রাউন বনাম বোর্ড অব
এডুকেশন মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে রায় দেয়।
৭.
কার্যকর গণতন্ত্রের ভিত্তি: বিচার
বিভাগীয় পর্যালোচনার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার শাসন নিশ্চিত করা হয়, যেখানে আইন
এবং নীতি নাগরিকদের অধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষা করে। এটি সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা
বন্ধ করে এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রাখে। তাই, গণতন্ত্রের প্রয়োগযোগ্যতা
রক্ষা করতে বিচার বিভাগী পর্যালোচনা সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৮.
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা: বিচার
বিভাগীয় পর্যালোচনার ধারণাটি নিশ্চিত করে যে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে
এবং এটি আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য একটি শক্তিশালী মাধ্যম। এটি বিচারকদের স্বাধীনতা
রক্ষা করে, যাতে তারা সরকারি চাপের আওতায় না পড়ে এবং স্বাধীনভাবে আইন প্রয়োগের সিদ্ধান্ত
নিতে পারে।
৯.
কংগ্রেস ও রাষ্ট্রপতির পর্যালোচনার ক্ষেত্র: বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার মাধ্যমে কংগ্রেস এবং রাষ্ট্রপতির
সিদ্ধান্তের সাংবিধানিকতা নিরীক্ষণ করা হয়। যখন কংগ্রেস বা রাষ্ট্রপতি এমন কোনো আইন
বা সিদ্ধান্ত নেন যা সংবিধান বিরুদ্ধ, তখন সুপ্রিম কোর্ট সেই আইন বাতিল করতে পারে।
এতে শক্তির অপব্যবহার প্রতিরোধ হয় এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রক্ষা পায়।
১০.
রাজ্যশক্তি এবং ফেডারেল শাসন: এটি
নিশ্চিত করে যে রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার উভয়ই সংবিধানের মধ্যে থেকে কাজ করছে।
সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য আইন এবং কেন্দ্রীয় আইন পর্যালোচনা করে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখে।
ফেডারেল সিস্টেমের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে এটি প্রতিটি রাজ্যের স্বাধীনতা এবং কেন্দ্রের
ক্ষমতাকে সুসংহত করে।
১১.
সাংবিধানিক সংস্কার প্রস্তাব: বিচার
বিভাগীয় পর্যালোচনা সংবিধান সংশোধনের একটি শক্তিশালী উপায় হিসেবে কাজ করে। যখন সমাজে
পরিবর্তন আসে, বিচার বিভাগ নতুন অবস্থার সঙ্গে সংবিধানের সঙ্গতি যাচাই করে এবং প্রয়োজনীয়
সংস্কারের প্রস্তাব করতে পারে। এতে সংবিধানকে আধুনিক সমস্যার জন্য উপযোগী করা হয় এবং
দেশের সমৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
১২.
রাজনীতির প্রভাব থেকে মুক্তি: বিচার
বিভাগীয় পর্যালোচনা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারকরা রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত থাকে।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা চাকরির মেয়াদ শেষে নির্দিষ্ট বেতনসহ কর্মরত থাকেন, যা
তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। এটি আইন এবং ন্যায়ের প্রতি অবিচলতা বজায়
রাখে, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একটি অপরিহার্য দিক।
১৩.
অপ্রকাশিত অধিকার রক্ষা: বিচার
বিভাগীয় পর্যালোচনা সংবিধানের অপ্রকাশিত অধিকারগুলো রক্ষা করে। অনেকে মনে করেন যে কিছু
অধিকার লিখিত না থাকলেও জনগণের মৌলিক অধিকারের অংশ, যেমন গোপনীয়তা বা বিবাহের অধিকার।
বিচার বিভাগ এগুলোকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে মান্যতা প্রদান করে, যা জনগণের জীবনযাত্রাকে
সুরক্ষিত করে।
১৪.
বিচার বিভাগের কর্তৃত্বের প্রতিফলন: বিচার
বিভাগীয় পর্যালোচনা বিচার বিভাগের ক্ষমতা এবং কর্তৃত্বের প্রতিফলন। এটি গণতান্ত্রিক
অবকাঠামোকে সুসংহত করতে আইন প্রণয়ন, প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের সাংবিধানিকতা রক্ষা এবং
দেশের ন্যায় নীতিকে শক্তিশালী করে।
১৫.
গণতান্ত্রিক সংস্কারের পথ সুগম করা: যদি
কোনো আইন বা নীতি সংবিধানের মূলনীতির পরিপন্থী হয়, তবে আদালত সেটিকে বাতিল করতে পারে
এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে পারে। এটি গণতান্ত্রিক সংস্কারকে ত্বরান্বিত করে।
১৬.
বিচার বিভাগের কর্তৃত্ব : বিচার
বিভাগীয় পর্যালোচনা বিচার বিভাগের শক্তি ও ক্ষমতার প্রতিফলন ঘটায়। এটি নিশ্চিত করে
যে সুপ্রিম কোর্ট সংবিধান রক্ষা ও ব্যাখ্যায় চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ।
উপসংহার:
বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্যতম স্তম্ভ।। এটি ক্ষমতার বিচ্ছিন্নকরণ এবং ভারসাম্য রক্ষা
করে, যা সরকারি কর্মকাণ্ডের বৈধতা পরীক্ষা করে এবং নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করে। এটি
সংবিধানের সর্বোচ্চতা বজায় রাখে, আইনসভা ও নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা
করে এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করে। সুপ্রিম কোর্টের এই ক্ষমতা সরকারের কার্যক্রমকে সংবিধান
অনুসারে পরিচালিত রাখতে সাহায্য করে এবং দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে সুসংহত করে।
12
সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণী বলতে কি বুঝ?

Shihabur Rahman
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কি?

Shihabur Rahman
মরণশীলতা ও প্রজননশীলতা বলতে কি বুঝ?

Shihabur Rahman
উপনিবেশবাদ কি?

Shihabur Rahman
গ্রামীণ সমাজের / সম্প্রদায়ের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট ব্যাখ্যা কর।
