ভূমি সংস্কার কাকে বলে? এর উদ্দেশ্য বর্ণনা করো।

Shihabur Rahman
ভূমি
সংস্কার কাকে বলে? এর উদ্দেশ্য বর্ণনা করো।
ভূমিকা: ভূমি সংস্কার হলো কৃষিজমির সুষ্ঠু বণ্টন, মালিকানা পরিবর্তন
এবং চাষিদের উন্নতির জন্য সরকারের নেওয়া নীতিগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা। এটি সাধারণত
জমির মালিকানা সীমাবদ্ধকরণ, ভূমিহীনদের মধ্যে জমি বণ্টন, কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং
উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য করা হয়। বিভিন্ন দেশে কৃষি উন্নয়ন ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত
করতে ভূমি সংস্কার চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশের মতো কৃষিপ্রধান দেশে ভূমি সংস্কারের
গুরুত্ব অনেক বেশি।
ভূমি
সংস্কারের উদ্দেশ্য:
১.
ভূমির ন্যায়সঙ্গত বণ্টন নিশ্চিত করা: ভূমি
সংস্কারের প্রধান উদ্দেশ্য হলো জমির সুষম বণ্টন করা। অনেক দেশে কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী
প্রচুর জমি মালিকানায় রাখে যার ফলে অন্যদের ভূমিহীন হয়ে পরে। ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে
এই অসম বণ্টন দূর করা হয় এবং কৃষকদের হাতে জমির মালিকানা প্রদান করা হয়।
২.
ভূমিহীন কৃষকদের জমির মালিকানা প্রদান: অনেক কৃষক ভূমিহীন হয়ে অন্যের জমিতে কাজ করে, ফলে তারা ন্যায্য
আয় থেকে বঞ্চিত হয়। ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে তাদের মাঝে কৃষিজমি বিতরণ করা হয়, যাতে
তারা স্বাধীনভাবে চাষ করতে পারে এবং নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি করতে পারে।
৩.
কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা: যেসব
জমি অধিক সম্পদশালী মালিকদের দখলে থাকে যেগুলো অনেক সময় অনাবাদী পড়ে থাকে। ভূমি সংস্কারের
ফলে এসব জমি ছোট কৃষকদের হাতে যায়, যারা নিজেদের শ্রম দিয়ে চাষ করে এবং কৃষি উৎপাদন
বাড়াতে পারে। ফলে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং দেশের কৃষিক্ষেত্রে উন্নতি ঘটে।
৪.
কৃষকের জীবনমান উন্নয়ন: ভূমি
সংস্কার কৃষকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। জমির মালিক হলে কৃষকরা সহজে ব্যাংক
থেকে ঋণ নিতে পারে, কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে এবং ফসলের ন্যায্য মূল্য পেতে
পারে। এতে তাদের জীবনমান উন্নত হয় এবং দারিদ্র্য কমে।
৫.
সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা : ভূমি
সংস্কারের মাধ্যমে সমাজে জমির বৈষম্য কমানো হয়। এটি ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে সম্পদের ভারসাম্য
আনতে সহায়তা করে। কৃষকরা নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং সমাজে সমতা বজায়
থাকে।
৬.
ভূমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা: অনেক
সময় কেউ কেউ অনেক জমির মালিক হওয়ার ফলে জমি অনাবাদী ফেলে রাখে বা কৃষিকাজের পরিবর্তে
অন্য কাজে ব্যবহার করে। ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে এ সকল জমি প্রকৃত কৃষকদের প্রদান করার
ফলে তারা তা উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করে, ফলে জমির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হয়।
৭.
কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি: ভূমি সংস্কারের ফলে ছোট কৃষকরা সরকারি সহায়তা পায় এবং আধুনিক
কৃষি প্রযুক্তি গ্রহণ করতে পারে। উন্নত বীজ, সার, সেচব্যবস্থা এবং কৃষি যন্ত্রপাতির
ব্যবহারে তারা নিজেদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে পারে, যা কৃষিক্ষেত্রে উন্নতি সাধারণ করে।
৮.
দারিদ্র্য দূরীকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা: ভূমি সংস্কারের ফলে কৃষকরা কাজের সুযোগ পায়, তারা নিজেদের জমিতে
কাজ করতে পারে, যা বেকারত্ব কমায়। পাশাপাশি কৃষিজমির উন্নয়ন হলে কৃষিভিত্তিক শিল্পও
গড়ে ওঠে, যা কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে।
উপসংহার: ভূমি সংস্কার একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা, যা কৃষকদের জীবনমান
উন্নত করে এবং কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করে। এটি শুধুমাত্র কৃষি খাতের উন্নতি আনে
না, বরং সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে। ভূমিহীন কৃষকদের জমির মালিকানা প্রদান, ভূমির
সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা, এবং দারিদ্র্য দূর করা ভূমি সংস্কারের প্রধান লক্ষ্য।
সঠিক ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে একটি দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হয় এবং সমাজে ন্যায্যতা
বজায় থাকে।
4