বাংলাদেশের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় ইসলামিক মূল্যবোধের প্রভাব আলোচনা কর।

Avatar

Shihabur Rahman

Academic

ধর্ম নিরপেক্ষতা কাকে বলে? বাংলাদেশের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় ইসলামিক মূল্যবোধের প্রভাব আলোচনা কর। 

ভূমিকা:  কবির ভাষায় "নাই কোনো বৈরিতা,এটাই ধর্মনিরপেক্ষতা।" ধর্ম নিরপেক্ষতা একটি নীতি, যেখানে সব ধর্মের প্রতি সমান সম্মান দেখানো হয় এবং কোনো নির্দিষ্ট ধর্মকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বিশেষ সুবিধা বা প্রাধান্য দেওয়া হয় না।। বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হলেও, ইসলামিক মূল্যবোধ দেশের সংস্কৃতি ও সমাজ ব্যবস্থায় গভীরভাবে প্রোথিত। ইসলাম ধর্ম মানুষের নৈতিকতা, সামাজিক আচরণ এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

 

ধর্মনিরপেক্ষতা: ইংরেজি Secularism শব্দের অর্থ ধর্মনিরপেক্ষতা বা(State neutrality in religious matters)।  এটি বলতে বোঝায় এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা যেখানে সরকার কোনো নির্দিষ্ট ধর্মকে বিশেষ সুবিধা  প্রদান করবে না বরং সকল ধর্মের মানুষ সমান অধিকার ভোগ করবে। বাংলাদেশে সাংবিধানিকভাবে ধর্ম নিরপেক্ষতা স্বীকৃত। সাধারণভাবে বলা যায় রাষ্ট্র কর্তৃক কোনো ধর্মকে বিশেষ সুবিধা না দিয়ে ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে সকল ধর্মের মানুষকে সমানভাবে মূল্যায়ন করাই মূলত ধর্মনিরপেক্ষতা।

 

ইসলামিক মূল্যবোধের প্রভাব: ইসলাম মানবতার ধর্ম। এ ধর্মে সার্বজনীন শান্তি এবং সমতার বিধান নিশ্চিত করা হয়েছে। ইসলামিক সংবিধান আল কুরআন বিশ্ব মানবতার জন্য এক চির অম্লান ও বিস্ময়কর পথ নির্দেশনা।  বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় ইসলামিক মূল্যবোধের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। নিচে এ বিষয়ে আলোচনা উপস্থাপন করা হলো;

 

১. ইসলামের সামাজিক ন্যায়বিচার: ইসলামে সামাজিক ন্যায়বিচারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সমাজে ধনী-গরিবের মধ্যে পার্থক্য কমাতে দান-সদকা, যাকাত ও ওয়াকফের ব্যবস্থা রয়েছে, যা বাংলাদেশে গরিবদের সহায়তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

২. পারিবারিক জীবনে ইসলামিক মূল্যবোধ: ইসলামের নীতির উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের অধিকাংশ মুসলিম পারিবারিক সম্পর্ক সংগঠিত হয়। সকলের প্রতি ইহসান,পিতামাতার প্রতি সম্মান, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা এবং যথাযথভাবে অর্পিত দায়িত্ব পালন করা ইসলামের মূল শিক্ষা।

 

৩. শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলাম: বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষায় ধর্মীয় পড়াশোনা ইসলামিক মূল্যবোধ সংরক্ষণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এই শিক্ষা ব্যবস্থা বাংলাদেশের মানুষের নীতি নৈতিকতায় আমূল পরিবর্তন সাধন করছে।

 

৪. নারীর মর্যাদা ও অধিকার: পৃথিবীতে একমাত্র ধর্ম ইসলাম যেখানে  নারীদেরকে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা  প্রদান করা হয়েছে। ইসলামে নারীদেরকে সর্বোচ্চ স্থান এবং পদমর্যাদায় উন্নীত করা হয়েছে। বাংলাদেশে নারী অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে  বিশেষত পারিবারিক আইন ও উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে  ইসলামিক মূল্যবোধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

৫. আইনি ব্যবস্থায় ইসলামিক প্রভাব: বাংলাদেশের পারিবারিক আইন ও ফৌজদারি আইন আংশিকভাবে ইসলামিক নীতির ভিত্তিতে গঠিত। বিবাহ, তালাক, উত্তরাধিকার ও পারিবারিক বিরোধ মীমাংসায় ইসলামিক আইন কার্যকর রয়েছে।

 

৬. অর্থনীতিতে ইসলামিক মূল্যবোধ: ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইসলামিক মূল্যবোধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুদবিহীন ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা দেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, যা ইসলামের সুদবিরোধী নীতির প্রতিফলন।

 

৭. দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলামের ভূমিকা: যাকাত ও সদকার মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করা এবং তাদের স্বাবলম্বী করতে উদ্যোগ গ্রহণ ইসলামের মূলনীতির অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশে ইসলামিক সংস্থা ও ব্যক্তি উদ্যোগে গরিবদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করা হয়।

 

৮. ইসলামিক আচার-অনুষ্ঠানের গুরুত্ব: বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মীয় উৎসব যেমন রমজান, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা সমাজ জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। এর মাধ্যমে মানুষের মাঝে সামাজিক সম্প্রীতি এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ইসলাম ধর্মের অনুষ্ঠানগুলো ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সমাজে বসবাসরত সকল মানুষের মাঝে  সামাজিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করে।

 

৯. নৈতিকতা ও সততার শিক্ষা: ইসলামে নীতি-নৈতিকতা ও সততাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ইসলামে বলা হয়েছে কল্যাণকামিতাই দীন। বাংলাদেশে ব্যবসা, প্রশাসন ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে মুসলিমদের সততা ও নৈতিকতার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

 

১০. সামাজিক সংহতি ও সম্প্রীতি: ইসলাম শান্তি ও ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষা দেয়। বাংলাদেশে ইসলামিক মূল্যবোধের কারণে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সামাজিক বন্ধন দৃঢ় থাকে। মুসলিমরা  ইসলামের অনুশাসন অনুযায়ী সকলের সাথে সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রেখে জীবন যাপন করার চেষ্টা করে।

 

১১. ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে মানবাধিকার: "মানবতা সবার আগে, মানব ধর্মই পরম ধর্ম। ইসলাম নারী পুরুষ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মানবাধিকার নিশ্চিত করে। ইসলামে মানবাধিকারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশে ইসলামের মানবিক নীতিগুলো ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

 

১২. ইসলামের শান্তির বার্তা: ইসলাম শান্তির ধর্ম। পৃথিবীর সকল স্থানে শান্তির সুবাতাস ছড়িয়ে দেওয়াই ইসলামের মূল লক্ষ্য। বাংলাদেশের সমাজে ইসলামিক শান্তির বার্তা প্রসারিত করার জন্য মসজিদ, ইসলামিক সংগঠন ও আলেমেদ্বীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

 

১৩. ইসলামের শৃঙ্খলা ও জীবনের নীতি: ইসলাম ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশ দেয়। কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে “তোমরা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করো না”। বাংলাদেশে মানুষের জীবনধারায় এই শৃঙ্খলা পরিলক্ষিত হয়।

 

১৪. ইসলামের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ: ইসলাম বিশ্বজনীন শান্তির লক্ষে চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাস নির্মূলে কঠোর বিধান আরোপ এবং সেই সকল বিধান বাস্তবায়নে কঠোর নির্দেশ প্রদান করেছে। ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশ নয় গোটা বিশ্বের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চিরতরে বন্ধের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম।

 

১৫. আধুনিক সমাজে ইসলামিক মূল্যবোধের স্থান: বাংলাদেশের আধুনিক সমাজের সর্বস্তরে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ইসলামিক মূল্যবোধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এদেশে প্রযুক্তি, শিক্ষা ও প্রশাসনের ক্ষেত্রেও ইসলামের নির্দেশনা অনুসরণ করা হয়। আধুনিক যুব সমাজের মাঝে ইসলামিক মূল্যবোধ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, সত্যবাদিতা, ন্যায়বিচার,সকলের প্রতি ইহসান ও আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসই মূলত ইসলামিক মূল্যবোধ। বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় ইসলামিক মূল্যবোধের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এদেশে সমাজের সর্বস্তরে ইসলামিক শিক্ষা, ইসলামি নীতিনৈতিকতা সুস্পষ্ট। তাই বাংলাদেশকে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সুস্থ, সুন্দর, সুখী, রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরে ইসলামিক মূল্যবোধের চর্চা ছড়িয়ে দেওয়া অত্যন্ত জরুরী।   

Links

Home

Exams

Live Exam

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD